২৭ বছর অপেক্ষার পর ৪৩ বছর বয়সে বিশ্বকাপে রেকর্ডের মালিক
স্বপ্ন পূরণের জন্য মানুষ কী না করতে পারে! উগান্ডার ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক এনসুবুগাকেই দেখুন। বয়স চলছে ৪৩, এখনও তিনি তরুণদের মতো স্বপ্নবাজ। আর এ কারণেই অবশেষে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে পেরেছেন তিনি। পথ যতো কঠিনই হোক, হাল না ছাড়লে যে একটা সময়ে ফল মেলে; এনসুবুগা তার বড় প্রমাণ। ১৬ বছর বয়স থেকে দেখে আসা স্বপ্ন ৪৩ বছর বয়সে পূরণ হয়েছে উগান্ডার ডানহাতি এই অফ স্পিনারের। মাঝে কতো দিন, মাস, বছর, যুগ চলে গেছে; কিন্তু স্বপ্ন দেখা থামাননি এনসুবুগা।
১৯৯৭ সালে ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় তার। আইসিসি ট্রফির সে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ, সেই আসরে খেলেছেন এনসুবুগা। ২৭ বছর আগের সেই টুর্নামেন্টে পূর্ব মধ্য আফ্রিকার হয়ে খেলেন তিনি। এই দলটি মূলত মালাওয়ি, তানজানিয়া, উগান্ডা ও জাম্বিয়ার খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ছিল। ১৯৯৮ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায় উগান্ডা, তখন থেকেই এনসুবুগার স্বপ্ন দেখা শুরু। যা পূরণ হলো ২০২৪ সালে এসে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাননি এনসুবুগা। পরের ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে মাঠে নামলেন তিনি, ছুঁয়ে দেখলেন দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসা স্বপ্নকে। বিশ্বকাপ অভিষেকটা রাঙিয়েও রাখলেন এনসুবুগা, দলের ঐতিহাসিক জয়ে বল হাতে গড়ে ফেললেন রেকর্ড।
পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে দলের ৩ উইকেটে জেতার দিনে এনসুবুগা ৪ ওভারে ২টি মেডেনসহ মাত্র ৪ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং। ৪ ওভার পূর্ণ করা কোনো বোলারই এর আগে এতো কম ইকোনমিতে বোলিং করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মেডেনই যেখানে বিরল, এনসুবুগা ৪ ওভারের মধ্যে ২টি করেছেন মেডেন।
কদিন আগেই রেকর্ডটি দখলে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার আনরিখ নরকিয়া। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ওভারে ৭ রানে ৪ উইকেট নেন ডানহাতি এই পেসার। তালিকায় নাম আছে বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৮ রান দেন তিনি, পান একটি উইকেট।
রান খরচায় এনসুবুগা সব সময়ই কৃপণ। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১৭টি মেডেন করেছেন তিনি, যা টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড। ১২টি মেডেন করা কেনিয়ার শেম ওবাদো এনগোচে দুই নম্বরে। আজ ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিলেন এনসসুবুগা। পাপুয়া নিউ গিনির ব্যাটসম্যানদের কাছে রীতিমতো ধাঁধার মতো ছিলেন তিনি। ৪ ওভারের ২৪ বলের মধ্যে ২০টিই ডট করেছেন এই অফ স্পিনার।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নাম উঠতেই আরেকটি রেকর্ডের মালিক হয়ে যান এনসুবুগা। ৪৩ বছর ২৮২ দিন বয়সী এই স্পিনারই এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায় তিনি দুই নম্বরে। তার চেয়ে বেশি বয়সে খেলছেন কেবল হংকংয়ের রায়ান ক্যাম্পবেল, ৪৪ বছর ৩৪ দিন বয়সে বিশ্বকাপ খেলেন তিনি।
এর আগে দল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হলেও এনসুবুগা আশা ছাড়েননি। উগান্ডার ক্রিকেটের পতন ঘটে, বছর পাঁচেক আগেই ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে চতুর্থ স্তরে নেমে যায় তারা। এই সময়ে পেছনে ফেলে দলটি, জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় উগান্ডা। এনসুবুগা পান স্বপ্ন পূরণের সুযোগ। বিশ্বমঞ্চে খেলার রোমাঞ্চ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'বিশ্বকাপ খেলার জন্য ২৭ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বপ্ন পূরণের জন্য অপেক্ষা করছি, এটা এখন সত্যি হতে চলেছে।'