কঙ্গনাকে চড় মেরে সাসপেন্ড নিরাপত্তা কর্মী!
বলিউড তারকা এবং লোকসভা নির্বাচনে সদ্য নির্বাচিত বিজেপির এমপি কঙ্গনা রানাওয়াতকে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে চড় মেরেছেন সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স-এর (সিআইএসএফ) একজন কনস্টেবল। 'কৃষকদের অসম্মান' করার জন্য তিনি কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন বলে অভিযোগ।
লোকসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি থেকে বিজেপির টিকিটে বিপুল ভোটে জিতে দিল্লি রওনা দিতে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন কঙ্গনা। সেখানেই চড় খেলেন সিআইএসএফের ওই নারী জওয়ানের হাতে।
কঙ্গনাকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে যে সিআইএফএফ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে, তার নাম কুলবিন্দর কউর। কুলবিন্দরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এফআইআরও দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, কঙ্গনাকে থাপ্পড় মারার পর এই প্যারামিলিটারি কনস্টেবল বলেছেন, 'কৃষকদের অসম্মান' করার জন্য বলিউড তারকাকে চড় দিয়েছেন তিনি। কৃষি আইনসহ অন্যান্য ইস্যুতে ২০২০-২১ সালের ১৫ মাসব্যাপী কৃষক আন্দোলনের সময় কঙ্গনার করা এক মন্তব্যের জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি কুলবিন্দরের।
বিমানবন্দরে এমপি কঙ্গনার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কুলবিন্দর এবং এরই এক পর্যায়ে অভিনেত্রীকে চড় মারেন তিনি।
মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একদল নিরাপত্তা কর্মকর্তা কঙ্গনাকে নিরাপত্তা তল্লাশির জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে কয়েকজন সিআইএসএফ কর্মকর্তার তাকে কথা বলতে দেখা যায়।
সিআইএসএফ এ ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি। তারা কনস্টেবল কুলবিন্দরকে জিগাসাবাদ করছে।
দিল্লিতে পৌঁছার পর অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি কঙ্গনা।
পরে সন্ধ্যার দিকে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক ভিডিও বার্তায় এ বলিউড তারকা বলেন, তিনি নিরাপদ আছে, তবে পাঞ্জাবের ক্রমবর্ধমান 'সন্ত্রাসবাদ' নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, 'আমি নিরাপদ আছি। একদম ঠিক আছি। ঘটনাটি সিকিউরিটি চেক-ইনে ঘটেছে। আমি সিকিউরিটি চেক-ইন করে বের হই। আমার আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই নারী গার্ড। তারপর পাশ থেকে এসে আমাকে মুখে চড় মারেন। তাকে জিজ্ঞেস করি, আমাকে চড় মেরেছেন কেন। তিনি বলেন, "আমি কৃষকদের আন্দোলন সমর্থন করি"। আমি নিরাপদে আছি ঠিকই, কিন্তু আমার চিন্তা—যে সন্ত্রাসবাদ পাঞ্জাবে বাড়ছে, সেটি আমরা কী করে সামলাব?'
কঙ্গনার ভাষ্য, ওই সিআইএফএফ কনস্টেবল বলেন, কৃষক বিদ্রোহের সময় কঙ্গনার করা '১০০ রুপি' মন্তব্যের জন্য তিনি অভিনেত্রীর ওপর নাখোশ ছিলেন। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন কঙ্গনা একবার বলেছিলেন, ১০০ টাকার জন্য দিল্লির রাস্তায় বসে রয়েছেন কৃষকরা। সেই পুরোনো মন্তব্যের জন্যই কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন তিনি।
কুলবিন্দর বলেন, 'তিনি বলেছিলেন, কৃষকরা ১০০ রুপির জন্য ওখানে বসে আছে। তিনি [কঙ্গনা] কি [১০০ রুপির জন্য] ওখানে গিয়ে বসে থাকতেন? উনি যখন এ কথা বলেন, তখন আমার মা ওখানে বসে আন্দোলন করছিলেন।'
২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক্সে ওই '১০০ রুপি' মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। বলিউড তারকা ওই পোস্টে দাবি করেছেন, এক বয়স্ক নারী তাকে বলেছিলেন যে ১০০ রুপি দিলে তিনি 'আসবেন'—অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে আন্দোলন করবেন।
সে সময় দিল্লির শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান মাঞ্জিদার সিং সিরসা বলেছিলেন, কঙ্গনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে 'নিঃশর্ত ক্ষমা' চাইতে হবে। পরে এ বলিউড তারকা ওই পোস্ট ডিলিট করে ফেলেন।
নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর জন্য মান্ডিতে যাওয়ার সময় কৃষকেরা চণ্ডীগড়ে কঙ্গনার বহর আটকে দিয়েছিলেন।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক পপ তারকা রিহানা এক্সে কৃষক আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করেছিলেন। ওই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, 'এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি না কেন?'
জবাবে আরেক টুইটে কঙ্গনা বলেছিলেন, 'কেউ কথা বলছে না, কারণ তারা কৃষক না। তারা ভারতকে সন্ত্রাসী; বিভক্ত করতে চেষ্টা করছে, যাতে চীন আমাদের ভঙ্গুর দেশের দখল নিয়ে চীনা উপনিবেশ বানাতে পারে।'
পরে কঙ্গনা ওই পোস্টও ডিলিট করে ফেলেন।
২০২১ সালের নভেম্বতে—কৃষক আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ মাস পর—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, যে তিন কৃষক আইন নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলো তুলে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে মান্ডি থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছেন কঙ্গনা। ৭৪ হাজারের বেশি ভোটে তিনি হারিয়েছেন কংগ্রেসের বিক্রমাদিত্য সিংহকে।