কঙ্গনাকে ‘চড়’ দেওয়া কুলবিন্দরের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে, তার সমর্থনকদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া অভিনেত্রীর
ক্ষমতাসীন বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে জেতার পরপরই চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক কনস্টেবলের হাতে 'চড় খেয়ে' আবার আলোচনায় বলিউড তারকা কঙ্গনা রানাওয়াত। এ নিয়ে গোটা দেশই দুই ভাগ হয়ে গেছে।
চড় খাওয়ার পর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মুখ খুলেছেন কঙ্গনা। যারা তাকে চড় মারার ঘটনায় সিআইএফএফ কনস্টেবল কুলবিন্দর কউরকে সমর্থন দিয়েছেন, তাদেরকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করেছেন এই বিজেপি এমপি।
'অনুমতি ছাড়া' তার 'শরীর স্পর্শ' করার পরও কুলবিন্দরের পক্ষে যারা কথা বলেছেন, তাদের শনিবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তাদের জন্য বার্তা দিয়েছেন কঙ্গনা।
টুইট বার্তায় কঙ্গনা লিখেছেন, 'প্রত্যেক ধর্ষক, খুনি, চোরের অপরাধের নেপথ্যে জোরালো আবেগ, মনস্তাত্ত্বিক বা আর্থিক কারণ থাকে। বিনা কারণে কোনো অপরাধ ঘটে না। তবু অপরাধের জন্যই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়, জেলে পাঠানো হয়। আর আপনি যদি অপরাধীর অপরাধ করার নেপথ্যে থাকা জোরালো আবেগীয় যুক্তিকে সমর্থন দেন, তাহলে আপনিও এদেশের আইন লঙ্ঘন করছেন।'
তিনি আরও লেখেন, 'মনে রাখবেন, কেউ যদি একজন মানুসের অনুমতি ছাড়াই তার শরীর স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখান এবং সেটা যদি আপনি সমর্থন করেন, তাহলে বলতে হয়, ধর্ষণ বা খুনের মতো ঘটনাও আপনাকে বিচলিত করে না।' এরপর তিনি এরকম মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিদের ইয়োগা বা ধ্যান করা পরামর্শ দেন। নইলে জীবন তিক্ত হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন।
ওই পোস্টে কঙ্গনা আরও লিখেছেন, 'দয়া করে এত বিদ্বেষ, ঘৃণা আর হিংসা পুষে রাখবেন না, নিজেকে মুক্ত করুন।'
কুলবিন্দরের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে, তার পক্ষে 'ইনসাফ যাত্রা'য় কৃষকেরা
এদিকে কঙ্গনাকে 'চড় মারা' সিআইএসএফ কনস্টেবল কুলবিন্দর কউর ও তার পরিবারের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
শনিবার পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষক ও শিখরা কুলবিন্দরের পৈতৃক বাড়িতে গেছেন তাকে সমর্থন ও সম্মান জানাতে। কুলবিন্দরের গ্রামের বাড়ি রাজ্যের কাপুরথালা জেলার মাহিনওয়াল গ্রামে।
এই সিআইএফএফ কনস্টেবলের পক্ষে কথা বলছে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনগুলো। ঘটনার নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে। আজ রোববার মোহালিতে 'ইনসাফ যাত্রা'র ডাক দিয়েছেন কৃষক নেতারা।
সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা, কিষাণ মজদুর মোর্চার পক্ষ থেকে কুলবিন্দরের পাশে দাঁড়ানোর কথা। রোববার মোহালির এসপি অফিসের সামনে 'ইনসাফ যাত্রা' বের করার কথা রয়েছে কৃষকদের।
এদিকে কুলবিন্দরের ভাই শের সিং টাইমস অভ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বোনের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
বোনের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআরের বিরুদ্ধে তারা 'লড়বেন' বলে জানিয়েছেন শের সিং।
কুলবিন্দরের বাড়িতে যাওয়া ব্যক্তিরা তার পরিবারকে সিরোপা (সম্মান জানানোর জন্য দেওয়া আঙরাখা) দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন।
পাঞ্জাবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও কুলবিন্দরের সমর্থনে সরগরম। কিছু নেটিজেন কঙ্গনাকে চড় মারার সমালোচনা করলেও তারা পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি নিয়ে অভিনেত্রীর করা মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন।
কুলবিন্দর কউরকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীতশিল্পী বিশাল দাদলানিও। প্রয়োজনে কুলবিন্দরকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
যা ঘটেছিল
এই চড়-কাণ্ড ঘটে ৬ জুন। লোকসভা নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি থেকে জিতে দিল্লি রওনা দিতে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন কঙ্গনা। সেখানেই তাকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে।
কঙ্গনার ভাষ্য, তাকে থাপ্পড় মারার পর এই সিআইএসএফ কনস্টেবল বলেছেন, 'কৃষকদের অসম্মান' করার জন্য বলিউড তারকাকে চড় দিয়েছেন তিনি। কৃষি আইনসহ অন্যান্য ইস্যুতে ২০২০-২১ সালের ১৫ মাসব্যাপী কৃষক আন্দোলনের সময় কঙ্গনার করা এক মন্তব্যের জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি কুলবিন্দরের।
বিমানবন্দরে এমপি কঙ্গনার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কুলবিন্দর এবং এরই এক পর্যায়ে অভিনেত্রীকে চড় মারেন তিনি।
মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একদল নিরাপত্তা কর্মকর্তা কঙ্গনাকে নিরাপত্তা তল্লাশির জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে কয়েকজন সিআইএসএফ কর্মকর্তার তাকে কথা বলতে দেখা যায়।
সিআইএসএফ এ ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি। তারা কনস্টেবল কুলবিন্দরকে জিগাসাবাদ করছে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর এক্স-এ এক ভিডিও বার্তায় কঙ্গনা বলেন, তিনি নিরাপদ আছে, তবে পাঞ্জাবের ক্রমবর্ধমান 'সন্ত্রাসবাদ' নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, 'আমি নিরাপদ আছি। একদম ঠিক আছি। ঘটনাটি সিকিউরিটি চেক-ইনে ঘটেছে। আমি সিকিউরিটি চেক-ইন করে বের হই। আমার আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই নারী গার্ড। তারপর পাশ থেকে এসে আমাকে মুখে চড় মারেন। তাকে জিজ্ঞেস করি, আমাকে চড় মেরেছেন কেন। তিনি বলেন, "আমি কৃষকদের আন্দোলন সমর্থন করি"। আমি নিরাপদে আছি ঠিকই, কিন্তু আমার চিন্তা—যে সন্ত্রাসবাদ পাঞ্জাবে বাড়ছে, সেটি আমরা কী করে সামলাব?'
কঙ্গনার ভাষ্য, ওই সিআইএফএফ কনস্টেবল বলেন, কৃষক বিদ্রোহের সময় কঙ্গনার করা '১০০ রুপি' মন্তব্যের জন্য তিনি অভিনেত্রীর ওপর নাখোশ ছিলেন। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন কঙ্গনা একবার বলেছিলেন, ১০০ টাকার জন্য দিল্লির রাস্তায় বসে রয়েছেন কৃষকরা। সেই পুরোনো মন্তব্যের জন্যই কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন তিনি।
কুলবিন্দর বলেন, 'তিনি বলেছিলেন, কৃষকরা ১০০ রুপির জন্য ওখানে বসে আছে। তিনি [কঙ্গনা] কি [১০০ রুপির জন্য] ওখানে গিয়ে বসে থাকতেন? উনি যখন এ কথা বলেন, তখন আমার মা ওখানে বসে আন্দোলন করছিলেন।'
২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক্সে ওই '১০০ রুপি' মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। বলিউড তারকা ওই পোস্টে দাবি করেছেন, এক বয়স্ক নারী তাকে বলেছিলেন যে ১০০ রুপি দিলে তিনি 'আসবেন'—অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে আন্দোলন করবেন।
সে সময় দিল্লির শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান মাঞ্জিদার সিং সিরসা বলেছিলেন, কঙ্গনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে 'নিঃশর্ত ক্ষমা' চাইতে হবে। পরে এ বলিউড তারকা ওই পোস্ট ডিলিট করে ফেলেন।
নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর জন্য মান্ডিতে যাওয়ার সময় কৃষকেরা চণ্ডীগড়ে কঙ্গনার বহর আটকে দিয়েছিলেন।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক পপ তারকা রিহানা এক্সে কৃষক আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করেছিলেন। ওই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, 'এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি না কেন?'
জবাবে আরেক টুইটে কঙ্গনা বলেছিলেন, 'কেউ কথা বলছে না, কারণ তারা কৃষক না। তারা ভারতকে সন্ত্রাসী; বিভক্ত করতে চেষ্টা করছে, যাতে চীন আমাদের ভঙ্গুর দেশের দখল নিয়ে চীনা উপনিবেশ বানাতে পারে।'
পরে কঙ্গনা ওই পোস্টও ডিলিট করে ফেলেন।
২০২১ সালের নভেম্বতে—কৃষক আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ মাস পর—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, যে তিন কৃষক আইন নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলো তুলে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে মান্ডি থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছেন কঙ্গনা। ৭৪ হাজারের বেশি ভোটে তিনি হারিয়েছেন কংগ্রেসের বিক্রমাদিত্য সিংহকে।