মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে বায়রাতে অস্থিরতা, এজিএমে হট্টগোল
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সোমবার (১০ জুন) জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির ৩৩তম এজিএমে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তাদেরকে পাঠাতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
এ সময় সিন্ডিকেট-বিরোধী অংশটি তাদেরকে নাজেহাল করা হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে বায়রার সিনিয়র সহসভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলামের নেতৃত্বে সভা থেকে ওয়াকআউট করে।
পরে বিকেলে রাজধানীর এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজ-উল-ইসলাম বলেন, 'সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বায়রার সভাপতি, মহাসচিব ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনের উসকানিতে তাদের কতিপয় সদস্য আমাদেরকে নাজেহাল করেন। এমনকি মঞ্চে সভাপতির পাশে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় আমাকে হেনস্তাসহ আক্রমণে উদ্যত হয়।'
সিন্ডিকেটসহ বায়রাকেন্দ্রিক সব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করে বায়রায় শৃঙ্খখলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান রিয়াজ-উল-ইসলাম ও পক্ষ। একইসঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে সমস্ত সিন্ডিকেট প্রথা বিলুপ্ত করে করে সব লাইসেন্সধারী মালিকদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটের হোতাদেরকে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া করা হয়েছে ।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বায়রা বলেছে, সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে এজিএম শেষ হয়েছে।
সংগঠনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'সভায় বিবিধ আলোচনার এক পর্যায়ে মত-দ্বিমতকে কেন্দ্র করে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো কোনো বক্তা নিজেদের ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করলে সভাপতি মহোদয় আলোচ্যসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে কিছুসংখ্যক সদস্য পরিকল্পিতভাবে হৈ চৈ শুরু করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ সভার স্থল ত্যাগ করেন। এরপরও সভার কার্যক্রম চলমান থাকে এবং সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে সাধারণ সভা শেষ হয়েছে।'
বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে মাত্র ১০০টি এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
বেশিরভাগ রিক্রুটিং এজেন্সিই মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেশন সিস্টেম গঠনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল, কিন্তু তারপরও অল্প কিছু এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে।
বায়রার সভাপতি আবুল বাশার ও মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথমে সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করলেও তারা এখন এ ব্যবস্থা পক্ষে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে, এমন এজেন্সিগুলোর সঙ্গে তারা জোটবদ্ধ।
এজেন্সিগুলো বিমান টিকিট দিতে না পারায় সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও গত ৩১ মে মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার কর্মী দেশটিতে যেতে পারেননি।
দুর্নীতি ও মালয়েশিয়ায় যাওয়া শ্রমিকদের দুর্ভোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।