মার্চ প্রান্তিকে এনবিএফআই খাতে আমানত কমেছে ৫২৫ কোটি টাকা
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) আমানত কমেছে ৫২৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ প্রান্তিক শেষে এনবিএফআই খাতে বকেয়া আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১.৩৭ শতাংশ কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক খাতে যেখানে এখন ৯-১০ শতাংশ হারে আমানত বাড়ছে, সেখানে এনবিএফআই খাতে আমানত কমে যাচ্ছে। এই খাতটিতে একটা সময় প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। বেশ কিছু এনবিএফআইয়ে এ ক্লাসিফাইড ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি।
এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। তাই গ্রাহকেরা নতুন করে আমানত করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অল্পকিছু এনবিএফআই ভালো পারফর্ম করছে, তবে মূল্যস্ফীতির কারণে তারাও খুব বেশি আমানত বাড়াতে পারছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চ প্রান্তিকে এনবিএফআই খাতের ফিক্সড ডিপোজিট কমার কারণেই সার্বিক আমানত কমে গেছে। তিন মাসে এই খাতে ফিক্সড ডিপোজিট কমেছে ৫৯৭ কোটি টাকা। খাতওয়ারি শ্রেণিবিভাগ বলছে, বেসরকারি খাতও এসব আমানত তুলে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড-এর (বিডি ফাইন্যান্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হামিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আস্থার ঘাটতির যে কথা বলা হয়, সেটি পুরনো সমস্যা।
তিনি বলেন, এর মধ্যেও বেশ কিছু এনবিএফআই ভালো পারফর্ম করছে। ফলে আস্থা না থাকায় আমানত কমেছে—এ কথা বলা যাবে না।
মূলত দুটি কারণে এনবিএফআই খাতে আমানত কমেছে উল্লেখ করে কায়সার হামিদ বলেন বলেন, 'প্রথমত, বর্তমানে আমরা আমানত নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২.৫৫ শতাংশ সুদ দিতে পারছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া ক্যাপের কারণে রেটটা বাড়ানো যাচ্ছে না।'
অন্যদিকে ব্যাংক ও সরকার তাদের সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক ব্যাংক ১৩ শতাংশ সুদহার দিচ্ছে। সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার রয়েছে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ। ফলে গ্রাহকেরা আমানত করার ক্ষেত্রে এনবিএফআইয়ের চেয়ে ব্যাংক বা ট্রেজারি বিল ও বন্ডই বেশি পছন্দ করছে বলে জানান তিনি।
কায়সার হামিদ বলেন, 'দ্বিতীয়ত, আমরা দেখছি ছোট আমানতকারী যারা আছেন, তাদের অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির কারণেই এসব আমানত কমছে বলে আমরা ধারণা করছি।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমানতের পাশাপাশি গ্রাহকও হারাচ্ছে এনবিএফআইগুলো। বছরের প্রথম তিন মাসে এনবিএফআই ৩ হাজার ৮৮০টিউ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। মার্চ শেষে এই খাতে ৪.২৭ লাখ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আমানত কমলেও ঋণ বেড়েছে এনবিএফআই খাতে। মার্চ শেষে এ খাতের বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ১.০৪ শতাংশ বা ৭৭০ কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টির খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের বেশি। সবগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা ১৭টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।