মৌসুমি ফল পরিবহনে ট্রাকের চাহিদা বৃদ্ধি, ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ
মৌসুমি ফল পরিবহনের জন্য ট্রাকের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। ট্রাকের ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামে ওপরে।
তাছাড়া, এ বছর কোরবানির ঈদের সময়ে মৌসুমি ফলের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বন্দর নগরীতে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।
ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে ট্রাকের সচরাচর ভাড়া থাকে ১৬,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা। ঈদের আগে সেই ভাড়া গিয়ে ঠেকে ৫০,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকায়।
একই হারে বেড়েছে দেশের অন্যান্য রুটের ভাড়াও। মাসখানেকের ব্যবধানে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ৫০,০০০-৫৫,০০০ থেকে বেড়ে ৯০,০০০ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
যার ফলে, টন প্রতি পণ্য পরিবহন ব্যয় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহনের ভাড়া একবার বেড়ে গেলে তা পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তার ওপর কয়েকদিন ঈদের ছুটিতে পণ্যপরিবহন বন্ধ থাকায়, ছুটির পর চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি থাকবে। তাই খুব দ্রুতই ভাড়া কমার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এতে বাজারের নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, "পাইকারি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম অনেকাংশে নির্ভর করে পরিবহন ভাড়ার ওপরে। এখন ফলের ভরা মৌসুম হওয়ায় ট্রাক ভাড়া বেড়ে নিত্যপণ্য বাজারে প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ টিবিএসকে বলেন, "ঈদের আগে অনেক কারখানায় পণ্য আনলোড করতে দেরি হওয়ায় মার্কেটে গাড়ির সংকট দেখা দেয়। এছাড়াও, ভরা মৌসুমে বিভিন্ন দেশীয় ফল পরিবহনে গাড়ির চাহিদা বেশি থাকায় ভাড়া বেড়ে যায়।
যদিও আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ভাড়া স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই পরিবহন নেতা।
ফল ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
এদিকে ফল ব্যাবসায়ীরা বলছেন, ভোগ্যপণ্য বা অন্য যেকোনো পণ্য চাহিদামতো সময়ে পরিবহনের সুযোগ থাকলেও আম, কাঠাল, লিচু, আনারস, তাল দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এসব ফল গাছ থেকে আহরণের পর এক-দুই দিনের বেশি রাখা যায় না।
আবার ফলগুলো ভারি হওয়ায় এক ট্রাকে বেশি ফল পরিবহনও সম্ভব হয় না। তাই পরিবহন মালিকরা বেশি ভাড়া চাইলেও তাদের কিছু করার থাকে না।
চট্টগ্রামের কদমতলী ফলমন্ডির ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন টিবিএসকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চল থেকে আম পরিবহন, বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁঠাল-আনারস পরিবহন, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গ থেকে কাঁচা তাল পরিবহনের চাপ বেশি।
তিনি বলেন, "রাজশাহী থেকে সচরাচর প্রতি ক্যারেট (২৫-২৭ কেজি) আম আনতে ভাড়া পড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ঈদের আগে রাজশাহী থেকে প্রতি ক্যারেটের ভাড়া পড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। শুক্রবার (২১ জুন) ভাড়া একটু কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় নেমেছে।"
তবে, রোববার থেকে পরিবহনের চাপ বাড়লে ভাড়া আবারও বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন এই ব্যবসায়ী।
প্রতিদিন, বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ফল নিয়ে ১০০-১৫০টি ট্রাক চট্টগ্রামে আসে বলে জানান নিজাম উদ্দিন।
চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী এলাকার লাব্বাঈক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিপন জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গরমের কারণে কাঁচা তালের চাহিদা বেশি। তাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে তালসহ কাঁঠালের পরিবহন চাহিদা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, "এক সপ্তাহ ধরে আমের জন্য ট্রাকের চাহিদাও বেশি। কোরবানির ঈদের বাজারের সাথে মৌসুমি ফলের চাহিদা এক হয়ে যাওয়ায় ট্রাক ভাড়াও বেড়েছে। বাজারের স্বাভাবিক নিয়মে বিভিন্ন জেলা থেকে গন্তব্য জেলার ভাড়া নির্ধারণ হওয়ায় একক প্রতিষ্ঠানের কিছুই করার থাকে না। ঈদের ছুটিতে গত এক সপ্তাহ পণ্য পরিবহন অনেকটা বন্ধ ছিল। কাল-পরশু মার্কেট খুললে ট্রাকের চাহিদা থাকবে বেশি।"
তাই আগামী এক-দুই সপ্তাহে ভাড়া কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান রিপন।