আইনি জটিলতা, খননযন্ত্র আটকে যাওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে ওয়াসার পানি যেতে বিলম্ব
আইনি জটিলতায় বিলম্ব ও খননযন্ত্র আটকে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা ও মানুষের বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানি পৌঁছাতে আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির অধীনে কর্ণফুলী নদীর বাম বোয়ালখালী থেকে কর্ণফুলী উপজেলায় ডিস্ট্রিবিউশান পাইপলাইন স্থাপনে নদীর তলদেশে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দ্বারা খনন করা হয়েছে। প্রায় ২৬২ মিটার মধ্যে ২০২ মিটার নদী অতিক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর গেল বছর অক্টোবরে তীরে এসে ৭৮ ফুট গভীরে আটকে যায় মেশিনটি।
নগরীর বাইরে শহরতলীর চার উপজেলা— আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় ওয়াসার সুপেয় পানি পৌঁছানোর কথা চলতি বছরের জুনে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, ২০১৫ সালের জুন মাসে ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের অক্টোবরে। ১,০৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ব্যয় দুই দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯৯৪ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।
এরমধ্যে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ইকোনোমিক ডেভলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) থেকে ১,২২৪ কোটি, বাংলাদেশ সরকারের ৭৫০ কোটি ১৪ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার ২০ কোটি টাকা অর্থায়ন রয়েছে।
তীরে এসে আটকে গেল টিবিএম, পুকুর নিয়েও রয়েছে আইনি বিরোধ
কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহার কালারপুলে অহিদিয়া মাদ্রাসার মসজিদের নিচে টিবিএমটি আটকে গেছে গত বছরের অক্টোবর মাসে। যন্ত্রটি তুলতে পুনঃনির্মাণের শর্তে মসজিদ ভাঙা হয়েছে। পাশাপাশি ভারী যন্ত্রপাতি রাখতে পুনঃখননের শর্তে মাদ্রাসার পুকুরটিও ভরাট করা হয়েছে।
তবে পুকুরটি ভরাটের জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পুকুরটির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করায় টিবিএম তোলার কাজ বন্ধ রয়েছে।
তবে এতসব বাধাবিঘ্নের পরেও কাজ শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দুই পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে কাজ চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য প্রকল্প মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া চলছে। গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮১.৫৪ শতাংশ।"
ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা ও শিল্পের সুযোগ বৃদ্ধি
ভান্ডাল-জুড়ি প্রকল্প সম্পন্ন হলে, চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, এতে দৈনিক ৫৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব হবে। উৎপাদিত পানি সরবরাহ হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলায় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ওয়াসার সেবার আওতায় আসবে।
কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড), সিইউএফএল, কাফকোসহ কর্ণফুলী বাম তীরের শিল্প কারখানাগুলো পানি পাবে। কর্ণফুলী নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে বছরের শুষ্ক মৌসুমের সংকটে পড়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পানির সংকট দূর করা যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম বলেন, "প্রাথমিকভাবে আমাদের লক্ষ্য চার উপজেলায় ১৫ হাজার সংযোগ দেওয়া। এ হিসেবে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ পানি পাবে। আশা করছি, জটিলতা কাটলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে পানি সরবরাহ করা যাবে। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।"
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "প্রকল্পের আওতায় আসা মানুষদের ভূগর্ভস্থ পানির প্রতি নির্ভরতা কমবে। কর্ণফুলীর পারের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করবে।"
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসায় বর্তমানে মোট সংযোগের সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৭১টি। এরমধ্যে আবাসিক ৮২ হাজার ৬৪২টি এবং বাণিজ্যিক ৬ হাজার ১২৯টি। নগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে এখনো পৌঁছেনি ওয়াসার পানি।