মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের দোষ স্বীকার করে মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ
২০১০ সালে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকসে বিভিন্ন মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করার পর বিদেশি সংঘাতে মার্কিন কুট কৌশল ও বিভিন্ন নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তখন হয়ত অ্যাসাঞ্জ ভাবতেও পারেননি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনবে, তিনি গ্রেপ্তার হবেন এবং মুক্তির জন্য তাকে দীর্ঘ আইনি লড়াই করতে হবে।
কয়েক বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ব্রিটিশ কারাগার থেকে মুক্তি পান উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। দীর্ঘ ১,৯০১ দিন একটি ছোট কক্ষে বন্দী থাকার পর সোমবার (স্থানীয় সময়) যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয় তাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ স্বীকার করবেন— এমন চুক্তিতে পৌঁছানোর পর সোমবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার কথা ছিল।
আজ আদালতে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ স্বীকার করেন এবং অবশেষে মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের প্রসিকিউটররা গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের ৬২ মাসের সাজা চাইলেও চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্যের কারাগারে কাটানো পাঁচ বছর তার সাজা হিসেবে গণ্য করে তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশন স্পষ্ট করে জানিয়েছে, লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে থাকা সময়কে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত কারণ তিনি এই মামলার জন্যই কারাভোগ করেছেন।
প্রসিকিউটর ম্যাংলোনা জানিয়েছেন, বেলমার্শ কারাগারে অ্যাসাঞ্জ যে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন তা যথেষ্ট এবং মামলাটি আজই শেষ হওয়া উচিত।
প্রসিকিউশন অবিলম্বে অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
অ্যাসাঞ্জের সাজা শোনানোর সময় প্রসিকিউটর ম্যাংলোনা বলেন, যদি এক দশক আগেও মামলাটি তার সামনে আনা হলে তিনি অভিযোগ স্বীকার করার যে চুক্তি, তা গ্রহণ করতেন না। তবে ২০২৪ সালের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জের কর্মকাণ্ডে ক্ষতির শিকার হয়েছে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী জেন রবিনসন সাংবাদিকদের বলেছেন, 'অবশেষে ১৪ বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে বাড়ি যেতে পারবেন। এমন একটি মামলার অবসান ঘটল যা ২১ শতকের প্রথম সংশোধনীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।'
আদালতের বাইরে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরা এটিকে বাক-স্বাধীনতার বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।
মুক্তির পর জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় নিজের ঘরে ফিরে যাবেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়