বাসযোগ্য শহরের তালিকায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কিয়েভের চেয়েও নিচে ঢাকা
২০২৪ সালে বিশ্বের সেরা বাসযোগ্য শহর কোনগুলো– সম্প্রতি তা জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপ। বাসযোগ্য শহর সম্পর্কে প্রতিবছরই এ জরিপ করে গ্রুপটির ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এরপর বিভিন্ন মানদণ্ড অনুসারে, বসবাসের জন্য সেরা বা অনুপোযোগী শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো– এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে এবছর ১৭৩টি শহরের ওপর এ জরিপ করা হয়েছে। যেখানে আবারো তলার দিকে বা ১৬৮তম অবস্থান লাভ করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচির চেয়ে মাত্র এক ধাপ উপরে, আর জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারের চেয়ে নিচে অবস্থান করছে ঢাকা।
অধিবাসীদের জন্য আরও বাসযোগ্য হতে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষগুলো যে তেমন উন্নতি করতে পারেনি– এই র্যাংকিং আরও একবার তা তুলে ধরেছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করলেই এই অবস্থানের তাৎপর্য স্পষ্ট হবে। জেনে রাখুন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার শিকার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ-ও ঢাকার চেয়ে তিন ধাপ উপরে ১৬৫তম অবস্থানে রয়েছে।
সে তুলনায়, আবারো সেরা বাসযোগ্য শহরের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা। এনিয়ে টানা তিন বছর তা ধরে রাখল অস্ট্রিয়ার রাজধানী।
এক্ষেত্রে পাঁচটি মানদণ্ডের মধ্যে চারটিতেই নিখুঁত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার স্কোর অর্জন করেছে ভিয়েনা। তবে এ শহরে খেলাধুলার আসর সেভাবে অনুষ্ঠিত না হওয়ায়– সাংস্কৃতিক মানদণ্ডে ১০০'র মধ্যে ৯৩.৫ স্কোর পেয়েছে। অবশ্য অন্যান্য ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে শহরটি বেশ এগিয়ে রয়েছে বলে জানায় ইকোনমিস্ট।
সেরা বাসযোগ্য হিসেবে শীর্ষ পাঁচের মধ্যেই আছে ইউরোপের: কোপেনহেগেন, জুরিখ ও জেনেভা। তুলনামুলক কম জনসংখ্যা থাকায়, এই তিন শহরে অপরাধের হারও কম। রাস্তাঘাটে যানজট ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় ভিড়ভাট্টাও কম। কানাডার দুটি শহর: ক্যালগেরি ও ভ্যাঙ্কুভার এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের: মেলবোর্ন, সিডনি, ওসাকা ও অকল্যান্ড রয়েছে শীর্ষ দশে।
বাসযোগ্যতার বিচারে একেবারে তলানিতে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ২০১৩ সাল থেকেই দামেস্ক এই শোচনীয় অবস্থানে। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরটির অধিবাসীদের দুর্দশা প্রকাশ করছে এই মূল্যায়ন। ২০২৪ সালে দামেস্ক মোট স্কোর পেয়েছে মাত্র ৩০.৭।
স্থিতিশীলতার মানদণ্ডে দামেস্কের সাথে একই রকম ২০ স্কোর পেয়েছে পাকিস্তানের করাচি। অর্থাৎ, এ দুটি শহরে সহিংসতার বা অস্থিতিশীলতার ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।
এই মানদণ্ডে বাজে স্কোর পেয়েছে ইউক্রেনের রাজধানীও। একারণে বাসযোগ্যতার দিক থেকে একদম নিচের সারির ১০ শহরের তালিকায় নেমে এসেছে কিয়েভ।
মধ্যপ্রাচ্যে যখন সংঘাতের আগুন জ্বলছে, এবং তা বৃহৎ আঞ্চলিক যুদ্ধে হিসেবে ছড়িয়ে পড়ার হুমকি তৈরি করেছে – তারমধ্যে স্থিতিশীলতার মানদণ্ডে কিয়েভের মতোই বাজে রেটিং পেয়েছে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব।
গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে অবকাঠামো, পরিবেশ ও সংস্কৃতিতেও ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের রাজধানীটির স্কোরের অবনতি হয়েছে। সবমিলিয়ে বাসযোগ্যতার বিচারে আগের অবস্থান থেকে ২০ ধাপ পিছিয়ে ১১২তম হয়েছে তেল আবিব। চলতি বছরের জরিপে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের ঘটনা।