ইমরানের শাস্তি ও কারাদণ্ড ‘আইনি ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’: জাতিসংঘের প্রতিবেদন
বিধিবহির্ভূত আটকের ওপর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে প্রথম তোশাখানা ও সাইফার মামলায় 'আইনি ভিত্তি ছাড়া' আটক ও শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এসব করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রথম তোশাখানা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তোশাখানা থেকে ইমরান যেসব উপহার নিজের কাছে রেখেছিলেন, তার তথ্য তিনি 'ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন'। তোশাখানা-সংক্রান্ত আরেকটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, সৌদির যুবরাজের উপহার দেওয়া একসেট অলংকার কম দাম দেখিয়ে তোশাখানা থেকে নিয়েছেন ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ইসলামাবাদের একটি আদালত পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) করা প্রথম মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে ইসিপি তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে। যদিও ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পরে তার তিন বছরের সাজা বাতিল করেন।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, ইমরানকে আটক ও সাজার জন্য আদালতে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, তাতে নানা অসংগতি ও অনিয়ম রয়েছে।
জাতিসংঘের দল তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্তে এসেছে, ইমরানকে 'আটকের কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না'। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাকে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে অযোগ্য করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের দলটি আরও বলেছে, ইমরানকে যেভাবে প্রথম তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত এবং তার বাসবভনে অনুপ্রবেশ করে তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক।
ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, ইমরানের বিরুদ্ধে করা সাইফার মামলায় 'আইনি ভিত্তি নেই', কারণ ইমরানের কাজ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেনি বলেই মনে হচ্ছে।
সাইফার মামলা একটি গোপন কূটনৈতিক নথি বা তারবার্তা-সংক্রান্ত। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই এর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন ইমরান। সে অভিযোগের প্রমাণ দিতে গিয়ে তিনি একটি নথি প্রকাশ্যে আনেন এবং জনসভায় তা প্রদর্শনও করেন। এটি নিয়েই ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আটক করা ছিল তার ও তার দলের বিরুদ্ধে 'ব্যাপক দমনমূলক কর্মসূচির অংশ'।
এছাড়া পাকিস্তানের সাধারণ 'নির্বাচনের দিন ব্যাপক জালিয়াতি ও পার্লামেন্টের কয়েক ডজন আসন চুরির' অভিযোগও তুলেছে জাতিসংঘের দলটি।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, এসবের 'যথাযথ প্রতিকার হবে মি. খানকে অবিলম্বে মুক্তু দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে তাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া'।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদসহ একাধিক মামলায় কারাগারে আছেন পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা।
ইমরান ও তার দল শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, তার বিরুদ্ধে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হয়ে মামলা করা হয়েছে।