কমছে জনসংখ্যা, দক্ষ কর্মীরও অভাব, তাই সপ্তাহে ছয় কর্মদিবস চালু করল গ্রিস
অনেক দেশে যখন বিভিন্ন কোম্পানি সপ্তাহে কাজ করার দিন কমিয়ে আনছে, সেই সময় গ্রিসের কর্মীদের কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এ কারণে তাদের এখন সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতে হবে। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য, 'উৎপাদনশীলতা বাড়ানো'।
একসময় অর্থনৈতিক সংকটে জর্জর গ্রিস এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও বেড়েছে। এখন দেশটি ৪৮ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ চালু করেছে।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে চালু হয়েছে নতুন এই নিয়ম। বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়ন একে 'বর্বরতা' বলে আখ্যা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস বলছেন, এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মূলত দুটি সংকটের কারণে। এক, গ্রিসের জনসংখ্যা কমছে। দুই, দেশটিতে দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে।
২০০৯ সালের শেষদিকে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৫ লাখ গ্রিক অভিবাসন করে অন্যান্য দেশে চলে গেছে। অভিবাসী হওয়ার অধিকাংশ গ্রিকই উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী।
কর্মকর্তারা জানান, ছয় কর্মদিবস শুধু চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেওয়া বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। বর্ধিত কর্মসপ্তাহের আওতায়, বাছাইকৃত কিছু শিল্প ও উৎপাদন কারখানায় কর্মীরা চাইলে দৈনিক দুই ঘণ্টা বাড়তি কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দৈনিক মজুরির সঙ্গে ৪০ শতাংশ 'টপ আপ ফি' পাবেন তারা।
গ্রিস সরকার বলছে, এ পদক্ষেপের ফলে কর্মীদের টাকা না দিয়ে ওভারটাইম করানো এবং অঘোষিত কাজ করানোর সমস্যার সমাধান হবে। প্রধানমন্ত্রী নতুন এ নিয়মকে 'প্রবৃদ্ধিমুখী' বলে অভিহিত করেছেন।
তবে কর্মস্থলে বলতে গেলে কোনো পরিদর্শনের ঐতিহ্য না থাকা দেশটিতে এ পদক্ষেপ কড়া সমালোচনার শিকার হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, নতুন নিয়মটি স্বাভাবিক পাঁচ কর্মদিবসকে শেষ করে দেবে। তাদের আশঙ্কা, ঊর্ধ্বতনেরা এখন চাইলেই কর্মীদের বাড়তি একদিন কাজ করাতে পারবেন।
নতুন নিয়মের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছেন বিরোধীরা।
বিভিন্ন দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চার কর্মদিবসের সপ্তাহ চালু করে দেখা গেছে, এতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে কাজে মনোযোগও। ২০২২ সালে বেলজিয়াম কর্মীদের পাঁচ দিনের বদলে চার দিন কাজ করার আইনি অধিকার দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডার মতো দেশগুলোতে চার কর্মদিবসের সপ্তাহ নিয়ে পাইলট কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
গ্রিকরা আগে থেকেই ইউরোপে সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করেন। ইইউয়ের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্যমতে, গ্রিকরা সপ্তাহে গড়ে ৪১ ঘণ্টা অফিস করেন; কিন্তু পারিশ্রমিক পান অনেক কম।