কোটা বাতিলের দাবি: দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর শাহবাগ থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর শাহবাগ মোড় থেকে সরে গিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (৩ জুলাই) বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তারা অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে তারা এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
এদিন বিকাল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
কর্মসূচিতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিভিন্ন কলাভবন, সূর্যসেন হল, হাজী মুহাম্মদ মহসীন হল, উপাচার্য বাসভবন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন এবং সেখানে অবস্থান নেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শাহবাগ মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
একই দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি করেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরও কয়েকটি দাবি হলো- সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেওয়া, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।
শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রিসভা। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার।