যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন স্টারমার
আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলো বামপন্থী দল লেবার পার্টি। এরইসঙ্গে, ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। এবং দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরছে ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই পরাজয় মেনে নিয়ে স্টারমারকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুনাক।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বুথ ফেরত জরিপে লেবার পার্টির জয়ের জোরালো আভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে জরিপের ফলই সত্যি হলো। ভোটে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টি।
বামপন্থী লেবার পার্টি পার্লামেন্টের মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩২৬টির বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। বিভিন্ন কেন্দ্রে এখনও ভোট গণনা চলছে; সমস্ত কেন্দ্রের গণনা শেষে কোন দল কতটি আসন পেলো, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।
এর আগে, বুথ ফেরত জরিপের ফলে লেবার পার্টির ৪১০ আসনে জয়ী হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি ১৩১টি আসন পেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যেকোনো দলকে এককভাবে ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ন্যূনতম প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে বিরোধী দল লেবার পার্টি।
পাঁচ বছর আগে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর এটি লেবার পার্টির জন্য এক ভূমিধস জয়।
লন্ডনে লেবার পার্টির নেতা স্টারমার বলেছেন, "পরিবর্তন এখন থেকেই শুরু হলো।"
উচ্ছ্বসিত জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, "সত্যি বলতে, আমি অত্যন্ত আনন্দিত।"
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বতন টুইটার) করা এক পোস্টে স্টারমার বলেছিলেন, "এই নির্বাচনে লেবার পার্টির পক্ষে যারা প্রচারণা চালিয়েছেন, যারা আমাদেরকে ভোট দিয়েছেন এবং আমাদের পরিবর্তিত লেবার পার্টিতে আস্থা রেখেছেন— তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।"
এদিকে, ১৩১টি আসনে জয়লাভের পূর্বাভাস নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির ইতিহাসে এবার সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী পারফরম্যান্সের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পর দেশটির রাজনীতিতে আসা অস্থিতিশীলতা— যার রেশে অন্তত ৫ জন নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন দেশটির জনগণ, সেইসঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি— এই সবকিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করলেন দেশটির সাধারণ মানুষ।
এদিকে বুথ ফেরত জরিপে মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের ৬১টি আসনে জয়লাভের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনার নাইজেল ফারাজের ডানপন্থী পপুলিস্ট রিফর্ম ইউকে পার্টি ১৩ আসনে জয়লাভ করতে পারে।
এবারের নির্বাচন স্টারমার এবং তার দল লেবার পার্টির জন্য বড় রকমের 'ঘুরে দাঁড়ানো'কে নির্দেশ করছে। কারণ ২০১৯ সালে পরাজয়ের পর অনেকেই বলেছিলেন, লেবার পার্টি পথ হারাতে বসেছে এবং অচিরেই অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু করে যুক্তরাজ্য। ভোট চলে স্থানীয় সময় রাত ১০টা পর্যন্ত।
মোট ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৪৫৯ জন।