এবার রূপগঞ্জে বেনজীরের বাংলো বাড়িতে ক্রোকের বিজ্ঞপ্তি ঝুলানো হলো
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের এবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত ২৪ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটি প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আজ শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল ৪টায় বাড়িটির গেটে ক্রোকের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে রূপগঞ্জে শহর থেকে এই বাংলো বাড়িতে আসেন জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা। দুদক নারায়ণগঞ্জের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মইনুল হাসান রওশানী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে ক্রোকের খবরেও বাসা ত্যাগ করেননি বাংলো বাড়ির কেয়ারটেকার। ভেতরে পোষা দুটি কুকুর জটলা দেখলেই চিৎকার করে এগিয়ে আসছে। অনুমতি না থাকায় বাড়ির ভেতরে এখনও কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাগ এলাকায় আনন্দ হাউজিং সোসাইটিতে কৃত্রিম লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে লাল রঙের আলিশান বাংলো বাড়ি। বেনজীর মাঝেমধ্যেই এ বাড়িতে আসতেন, রাত্রিযাপনও করতেন। বাংলো বাড়িটিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়।
বেনজীর প্রায় আট বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় জায়গা কেনেন। ২০২২ সালে এই জমিতে ওই বাড়ি করেন তিনি।
গত ১২ জুন আদালতের আদেশে তৃতীয় দফায় জব্দ করা হয় বেনজীর আহমেদের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ। যেই তালিকায় রয়েছে রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিংয়ে অবস্থিত এই বাংলো বাড়িটি। বলা হচ্ছে, বাড়িটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এর আগে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বিপুল পরিমাণ 'অবৈধ সম্পদ' জব্দ করে দুদক। গোপালগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে রিসোর্ট, রাজধানীর গুলশানে ১০ হাজার বর্গফুটের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট (চারটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে), বান্দরবানে ২৫ একর বাগানবাড়িতে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। এবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত ২৪ কাঠা জমির ওপর বেনজীরের দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটিও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হলো।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম বলেন, 'আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন এই সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বাড়ির দরজাগুলো পাসওয়ার্ড লক সিস্টেম হওয়ায় তা খোলা যায়নি। আগামী সোমবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা আবার আসব। ভেতরে থাকা পাখি ও কুকুর এখানেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভেতরের কেয়ারটেকাররাও এখানেই থাকবেন।'
দুদকের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মইনুল হাসান রওশানী বলেন, 'বাড়িটি চারটি প্লট মিলে ২৪ কাঠার একটি জায়গা। এর আনুমানিক মূল্য এখন বলা যাচ্ছে না। সাভানা ইকো রিসোর্টের মতো এ বাংলোটির কোনো ব্যবহার করা হবে কি না, তা জেলা প্রশাসনের পরবর্তী সিদ্ধান্তে জানানো হবে।'
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ' এবং ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ অনুসন্ধান শুরু হলে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সপরিবারে দেশত্যাগ করেন বেনজীর।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ২০৫টি দলিলে ৭০২ বিঘা জমি (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সন্ধান পায় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে এবং ১২ জুন আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব সম্পত্তি গড়েন বেনজীর।
দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অনুসন্ধান করছে।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান বেনজির। এরপর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসরে যান তিনি।