১৪ দিন ধরে বন্ধ নৌযান চলাচল, সেন্টমার্টিনে আবারও খাদ্য সংকটের আশঙ্কা
সর্বশেষ গত ২২ জুন কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে জরুরি পণ্য ও কিছু সংখ্যক যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গিয়েছিল দুটি ট্রলার। একইসঙ্গে ওইদিন সেন্টমার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ যাত্রী নিয়ে শাহপরীর দ্বীপে আসে দুটি স্পিডবোট। এর পর গত ১৪ দিনে একটি ট্রলার বা স্পিডবোটও সেন্টমার্টিন যায়নি। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফেও আসেনি কোন নৌযান।
ফলে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আবার খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও প্রশাসন বলছেন, মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত নৌরুট পরিবর্তন করে বিকল্প রুটে সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বর্তমান উত্তাল সাগর ও আবহাওয়াজনিত কারণে নৌযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে বিকল্প রুটে দুটি ট্রলার ২২ জুন সেন্টমার্টিনে যায়। দুই ট্রলারে তিন শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার, কিছু খাদ্যপণ্য ও কয়েকজন যাত্রী ছিল। একইসঙ্গে সেন্টমার্টিন থেকে রোগীসহ ১৫ জন যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট শাহপরীর দ্বীপে গেছে। টানা ১৪ দিন আর কোনো নৌযান চলাচল করেনি।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, বিকল্প নৌরুটটি শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের 'গোলগরা'নামের এলাকা দিয়ে। ওই এলাকা বঙ্গোপসাগর হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ। একইসঙ্গে এখন বর্ষাকাল। ঝুঁকি বেড়েছে আরও বেশি। ট্রলার মালিক বা চালক ঝুঁকিপূর্ণ এ নৌরুট দিয়ে নৌযান চালাতে রাজি না।
সেন্টমার্টিন স্পিবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, উত্তাল সাগর হওয়ায় বিকল্প পথটি স্পিডবোট ব্যবহারের উপযোগী না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমর্কতা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, 'খাদ্যসংকট নিরসনে নাফনদীর পরিবর্তে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল দিয়ে সেন্টমার্টিনে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ট্রলার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও সাগর উত্তাল থাকায় কোনো ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কি করা যায় তা বিবেচনা করা হচ্ছে।'
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে গত ১ জুন বিকেলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ যাত্রীর এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এছাড়া গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে একই পয়েন্টে ফের গুলি করা হয়।
গত ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়।
প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে। গুলিবর্ষণের এসব ঘটনায় হতাহতের না হলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
পরে ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২২ জুনের পর থেকে সেটিও বন্ধ রয়েছে।