জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্বের প্রথম থ্রিডি হলোগ্রাফ প্রযুক্তির নোট আনল জাপান
বুধবার (৩ জুলাই) জাপানে ছাড়া হয়েছে নতুন ইয়েন নোট। গত দুই দশকের মধ্যে প্রথম নতুন কোনো নোট জারি করেছে দেশটি। জালিয়াতি ঠেকাতে নোটগুলোতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে থ্রিডি হলোগ্রাম প্রযুক্তি। জাপানের ন্যাশনাল প্রিন্টিং ব্যুরো বলছে, বিশ্বব্যাপী কাগুজে টাকায় এ ধরনের প্রযুক্তি এটিই প্রথম।
নোটগুলোর বিশেষত্ব হলো— নোটের হলোগ্রামগুলো আপনি যে দিক থেকে দেখেন তার ওপর নির্ভর করে তার প্রতিকৃতির দিক পরিবর্তন করে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নতুন ১০ হাজার ইয়েন, ৫ হাজার ইয়েন এবং ১ হাজার ইয়েন নোটের উন্নত জাল বিরোধী বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। ব্যাংক অফ জাপানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি আশা করি মানুষ নতুন নোটগুলো পছন্দ করবে এবং তারা জাপানি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়তা করবে'।
তবে নতুন নোটের পাশাপাশি পুরোনো নোটগুলোও চালু থাকবে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির বেশিরভাগ ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহার করতে এবং বাস ভাড়া পরিশোধ করতে মানুষের এখনও পুরোনো নোটের প্রয়োজন হবে'।
প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'নতুন নোটগুলোতে জাপানের পুঁজিবাদ, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি রাখা হয়েছে'।
১০ হাজার ইয়েনের নোটে 'জাপানি পুঁজিবাদের জনক' হিসেবে পরিচিত ইচি শিবুসাওয়ার ছবি রয়েছে, যিনি জাপানের আধুনিক অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৫ হাজার ইয়েনের নোটে স্থান পেয়েছে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রবক্তা শিক্ষাবিদ উমেকো সুদার প্রতিকৃতি।
টিটেনাস ও বিউবোনিক প্লেগ নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত চিকিৎসক ও ব্যাকটেরিওলজিস্ট শিবাসাবুরো কিতাসাতোর প্রতিকৃতি ১ হাজার ইয়েনের নোটে তুলে ধরা হয়েছে। শিবাসাবুরো কিটাসাতোকে 'আধুনিক জাপানি ওষুধের জনক'ও বলা হয়ে থাকে।
নতুন নোটের পেছনে টোকিও স্টেশন, উইস্টেরিয়া ফুল এবং উকিও-ই শিল্পী কাতসুশিকা হোকুসাইয়ের মাউন্ট ফুজির ছবি রয়েছে। এছাড়া নোটের মুদ্রণও আগের নোটগুলোর তুলনায় বড় করা হয়েছে যাতে পড়তে সুবিধা হয়, বিশেষত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য।
আগামী বছরের মার্চের শেষ নাগাদ প্রায় ৭৫০ কোটি নতুন নোট ছাপানো হবে। এখন প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইয়েনের সমমূল্যের নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
ব্যাংক অফ জাপান জানিয়েছে, নতুন নোটগুলো মানুষের হাতে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। নোটগুলো প্রথমে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থায় যাবে, তারপরে এটিএম এবং স্টোরগুলোতে পাওয়া যাবে।
যদিও জাপানে জাল নোটের সমস্যা অতটা প্রকট নয়। ২০২৩ সালে পুলিশ মাত্র ৬৮১টি জাল নোট শনাক্ত করেছে, যা ২০০৪ সালের রেকর্ড ২৫ হাজার ৮৫৮টি থেকে অনেক কম।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন