নারায়ণগঞ্জে বেনজীরের বাংলোটি ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের রূপগঞ্জের ডুপ্লেক্স বাংলো বাড়িটি ক্রোক করা হলেও এখনও পর্যন্ত বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। ডিজিটাল লক সিস্টেম থাকায় আগামীকাল সোমবার 'টেকনিক্যাল সাপোর্ট' এনে দরজা খোলার পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন। এরপরেই ভেতরের মালামালের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ডুপ্লেক্স বাড়িটি নিয়ে প্রশাসন কী করতে চায়–একইসাথে সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বেনজীর আহমেদের বেশকিছু সম্পত্তি ইতোমধ্যে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেসব থেকে আয় জমা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তেমনই ভাবনা রয়েছে রূপগঞ্জের এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি নিয়েও। তবে এখনই এবিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি জেলা প্রশাসন বা ইনভেন্টরির জন্য গঠিত কমিটি।
গতকাল শনিবার বাড়ির প্রধান ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশের পর ভেতরে দোতলা বাড়ি, কিছু পোষা প্রাণী ও বাড়ির চারধারে লাগানো গাছপালা দেখতে পান দুদক জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত টিম। তবে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি লক সিস্টেমের কারণে। জানালাগুলোও কালো কাঁচে ঢাকা থাকায় ভেতরে কি রয়েছে তা ভালো করে দেখা যায়নি। সোমবার লক ভাঙ্গার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হবেন তারা। এরপরে ভেতরে ঢুকে যা যা পাওয়া যায় তার তালিকা করবেন এবং ভেতরের চিত্র বর্ণনা করবেন গণমাধ্যমের সামনে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের পাঁচ সদস্যের কমিটি রয়েছে এই ইনভেন্টরির (মালসামানের তালিকা প্রস্তুতের) জন্য। আমাদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দুদক কর্মকর্তা, পিডব্লিউডির কর্মকর্তা মিলিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দেয়ার পরে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে এই বাড়িটি কীভাবে তত্ত্বাবধায়ন বা ব্যবহার করবে। যেহেতু বাড়িটি এখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে, তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ সতর্কতার সাথেই করতে হবে।'
দেশের বিভিন্ন স্থানে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি উন্মুক্ত করে তা থেকে আয়ের পথ বের করেছেন কোন কোন জেলার তত্ত্বাবধায়করা। রূপগঞ্জের এই বাংলো বাড়ি থেকে আয়ের কোন সুযোগ খুজবে কিনা– প্রশাসন এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, 'যেখানে ভাড়া দেয়া হচ্ছে বা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, সেগুলো অনেক বড় স্থান। রূপগঞ্জের মত ভেতরের এলাকায় কেউ আসবে কিনা– তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এখান থেকে ভাড়া আদায় করার সুযোগ আছে। কমিটির প্রতিবেদন ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'
বাড়িতে থাকা পোষা প্রাণীর বিষয়ে বলেন, 'ম্যাকাও পাখিটি হয়তো বনবিভাগ কিংবা চিড়িয়াখানা কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর ভেতরে থাকা দুটি কুকুর মূলত দেশীয় প্রজাতির। সেগুলো হয়তো বাড়ির আঙ্গিনাতেই রাখা হবে। অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।'
গতকাল শনিবার রূপগঞ্জে পুলিশ হাউজিং এ ২৪ কাঠা জমির উপর নির্মিত বেনজীর আহমেদের বাংলো বাড়িতে ক্রোক নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। প্রায় ৮ বছর আগে বেনজীর আহমেদ রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ এলাকার গুতিয়াব মৌজার প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় এ জায়গা কেনেন। ২০২২ সালে এই জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি।
বাড়িটির আনুমানিক মূল্য বলা হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাড়ির পাশে নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। লেকের পাশের আলিশান এই বাড়ি দূর থেকেও সাধারণ মানুষের নজর কাড়ে। স্থানীয়রা জানান, বেনজীর মাঝেমধ্যেই এ বাড়িতে আসতেন, রাত্রিযাপনও করতেন।
সম্পত্তিটি জব্দের (ক্রোক) অভিযানের পর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, 'বাড়ির দরজাগুলো পাসওয়ার্ড লক সিস্টেম হওয়ায় তা খোলা যায়নি। আগামী সোমবার আবারও এই বাড়িতে আসবে আমাদের টিম।'
দুদকের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মইনুল হাসান রওশানী জানান, 'বাড়িটি চারটি প্লট মিলে ২৪ কাঠার একটি জায়গা। এর আনুমানিক মূল্য এখন বলা যাচ্ছে না। সাভানা ইকো রিসোর্টের মতো এ বাংলোটির কোনো ব্যবহার করা হবে কি না, তা জেলা প্রশাসনের পরবর্তী সিদ্ধান্তে জানানো হবে।'