ডেঙ্গু রোগী: সবচেয়ে বেশী মগবাজার-উত্তরা-রামপুরায়, কম ক্যান্টনমেন্টে
ঢাকা শহরের হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন উত্তরা, রামপুরা ও মগবাজার এলাকার বাসিন্দারা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১২টি এবং বেসরকারি ৩০টি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭,৩০৭ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর এ তথ্য দিয়েছে। গত রবিবার (২৫ আগস্ট) এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইইডিসিআর।
জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে উত্তরা, রামপুরা ও মগবাজার এলাকার রোগী পাওয়া গেছে ৩০০ জনের বেশি।
সবচেয়ে কম রোগী পাওয়া গেছে ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত, ভাসানটেক, মাতুয়াইল, উত্তরখান, সুলতানগঞ্জ, হাজারীবাগ, বসিলা, বাগবাড়ি এলাকায়। হাসপাতালে এসব এলাকা থেকে আগত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ থেকে ৫০ জন।
এছাড়া যাত্রাবাড়ী, লালমাটিয়া, মালিবাগ, খিলগাঁও, দয়াগঞ্জ এলাকার রোগীর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০ জন। আর গুলশান, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, জাফরবাদ, মোহাম্মদপুর, রাজারবাগ এলাকা থেকে আগত রোগী ছিলেন ১৫০ থেকে ২০০ জন।
বাড্ডা, মেরাদিয়া, বাসাবো, ধানমন্ডি, বাড়িধারা এলাকার রোগী ১০০ থেকে ১৫০ জন। ৫০ থেকে ১০০ জন রোগী পাওয়া গেছে ডানিয়া, পোস্তগোলা, মিরপুর ১,২, ৭, ১০,১১, আগারগাঁও, মনিপুরিপাড়া, আদাবর, বাড্ডা থানার অন্তর্ভূক্ত এলাকায়।
এর আগে গত ২৭ জুলাই আরও একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ঐ জরিপে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে মগবাজারের বাসিন্দা ছিলেন সবচেয়ে বেশি। ঐ সময় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে মগবাজারের লোক ছিলেন ৬০ জনের বেশি।
সে সময় উত্তরা থেকে আগত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ থেকে ২০ জন। এক মাসের ব্যবধানে উত্তরার রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
এক মাসের ব্যবধানে উত্তরা, রামপুরায় ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “এখন ঢাকার সব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। কিছু জায়গায় আগে বেশি রোগী ছিল, সেসব জায়গায় এখন কমেছে।
তবে কোনও এলাকার সবচেয়ে বেশি রোগী হওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই এলাকায় ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি।মানুষ এখন বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে, সেখান থেকেও তারা আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো এলাকায় ডেঙ্গু রোগী একেবারে কমে যায়নি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার উৎস হ্রাস বা সোর্স রিডাকশন এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। চলমান কর্মসূচী অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বরে রোগী বাড়বে না বলে আশা করা যাচ্ছে।”
ডেঙ্গু রোগীদের ডাটাবেজের আওতায় আনতে হবে
মেডিক্যাল এনথ্রোপলজিস্ট ও আইসিডিডিআর,বির সাবেক সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর আতিক আহসান বিজনেস স্ট্যাডার্ডকে বলেন, “ডেঙ্গু রোগীর হার এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় শিফট করে। এক সপ্তাহে এক এলাকায় রোগী বেশি বললে পরের সপ্তাহে সেখানে রোগী একই থাকবে এমন নয়।
এক সপ্তাহে কোন এলাকায় স্প্রে করা হলে সে সপ্তাহে ওই এলাকায় কম এডিস মশা জন্মাতে পারে। কারণ এডিস মশার ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে আট থেকে দশদিন লাগে। সে কারণে একটি নিদিষ্ট এলাকায় রোগী আট থেকে দশদিন কম থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ডাটাবেজের আওতায় আনতে হবে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইউএস-এ তে এটি করা হয়। প্রত্যেক রোগী এনএসওয়ান পর্যায়ে গেলেই সরকারকে তা জানাতে হবে।
কোথাও এনএসওয়ান পজেটিভ রোগী পাওয়া গেলে তাকে আলাদা করে চিকিৎসা দিলে এবং তিনি যেখানে থাকেন সেখানের চারশো মিটারের মধ্যে মশা নির্মূল করলে অন্য কারও মধ্যে ডেঙ্গু ছড়াবে না।’
সবাইকে ডাটাবেজের আওতায় এনে, লোকেশন চিহ্নিত করে, মশা নিধন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া গেলে আগামী বছর এবারের মত আউটব্রেক হবে না বলে জানান এ গবেষক।
যারা আক্রান্ত হচ্ছেন
হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৩৬৪ জন রোগীর বয়স বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের ২৭ শতাংশ এই বয়সী।
১ থেকে ৫ বছর বয়সী ৬%, , ৫-১৫ বছর বয়সী ১৮%, ২৫-৩৫ বছর বয়সী ২০ শতাংশ, ৩৫-৪৫ বছর বয়সী ১৩%, ৪৫-৫৫ বছর বয়সী ৮%, ৫৫-৬৫ বছর বয়সী ৪% মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮% পুরুষ ও ৩২% নারী।