যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ডেঙ্গু: গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা
চলতি বছর নভেম্বর মাসের শেষেও ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়াই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হলেও ডেঙ্গু মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেনি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) সভাকক্ষে 'ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইপাব) এ বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, "মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে এডিসের প্রজনন হার অনেকটাই বেশি। এই সময়টাতে বৃষ্টিও বেশি হয়। কাজেই আমরা যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে এই সময়ের আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করতে হবে। কিন্তু আমরা সময় মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ডেঙ্গু সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।"
আইইডিসিআর'র সাবেক আরেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বলেন, "করোনার সময় থেকে আমরা কমিউনিটি এংগেজমেন্টের বিষয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই বিষয়টাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও আমাদের কী কী করতে হবে তা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি না। এখানেই আমাদের মূল সমস্যা।"
তিনি বলেন, "ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের সভা-সেমিনার করেছি। কিন্তু এভাবে আমরা মিটিং করলে কী হবে? আমি আজ পর্যন্ত জানি না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো ধরনের টাস্কফোর্স কমিটি হয়েছে কি না। এক-দুইটা টেকনিক্যাল কমিটি হয়েছে, যার সর্বমোট মিটিং হয়েছে মাত্র তিনটি।"
ড. আলমগীর আরো বলেন, "ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে আগেই একটি ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি (জাতীয় কৌশল) প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো সেটি কার্যকর করা হয়নি। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি) দেখিনি। অথচ আমরা সবাই বিচ্ছিন্নভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি।"
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) এমএম আক্তারুজ্জামান বলেন, "আমার কাছে মনে হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলেই আটকে আছি। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইপাবের সভাপতি ও নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, "আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো হিউম্যান রিসোর্স (জনবল)। যে হারে রোগী বেড়েছে, সেই অনুপাতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে জনবল নেই।"
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনে করে শুধু রোগী দেখার দায়িত্ব আমাদের, আবার কেউ বলছে টিকা আসলেই সমস্যা সমাধান হবে, তাহলে কি টিকা না আসা পর্যন্ত আমরা বসে থাকব? আগামী দিনে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।"