জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, শিক্ষকসহ আহত ৬০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এক শিক্ষক ও চার ছাত্রীসহ অন্তত ৬০জন আহত হয়েছেন।
আজ সোমবার (১৫জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষকের নাম আওলাদ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সোয়া ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বটতলার দিকে গেলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নেতৃত্বে আদোলকারীদের ওপর হামলা করে দলটির নেতা-কর্মীরা।
হামলায় চার ছাত্রীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু, মাহফুজ ইসলাম মেঘ, নাজমুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এক আন্দোলনকারী বলেন, হামলায় আমাদের এক শিক্ষক আহত হয়েছেন। তিনি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন। ছাত্রলীগ হামলা চালানোর মুহূর্তে পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন তিনি। পরিচয় দেওয়ার পরও তার ওপর হামলা করা হয়েছে।
হামলায় আহত শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বৃষ্টি টিবিএসকে বলেন, 'আমার বান্ধবী ঐশীকে খুব বাজেভাবে মেরেছে। হামলা শুরু হলে সবাই দৌড়াতে শুরু করে। আমরা মাঝখানে পড়ে যাই। ঐশী রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেলে ওর গায়ের ওপর দিয়ে হামলাকারীরা হেঁটে চলে যায়। এ সময় দুজন ওকে বাঁশ দিয়ে পেটায়। আমি ঐশীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে যেতে পারছিলাম না।'
তিনি বলেন, 'আজ রাতে আবার মিছিল-প্রতিবাদ শুরু হলে আমরা আবার যাব। মরলে মরব।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. শামসুর রহমান জানান, অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহতদের সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মিরাজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলেবীন সোলায়মান টিবিএসকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত ১৫ জন আহত শিক্ষার্থীকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে দুয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।'
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন।