ঢাকার বাইরে মাত্র দুটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ: আদালতের অসন্তোষ
সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রয়েছে মাত্র দুটি জেলায়। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও পাবনা জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো জেলার হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুরুতর অবস্থায় রোগীদের ঢাকায় আনার সময় কেউ কেউ পথেই মারা যান।
সরকারি হাসপাতালগুলোর এই তীব্র আইসিইউ সংকট এবং এর ফলে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টিতে চরম অসস্তোষ প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত।
এক রিটের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কতগুলো আইসিইউ এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) আছে তার তালিকা চেয়েছিলেন আদালত।
আদালতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া এক প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয় তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বছরে চিকিৎসা নেন প্রায় চার কোটি রোগী। এর মধ্যে গুরুতর রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। এদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেবার প্রয়োজন হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, হাসপাতালের মোট শয্যার ১০ শতাংশ আইসিইউ শয্যা হতে হবে। তবে ৪ শতাংশকে ন্যূনতম হিসেবে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন ২০১৮এর তথ্য অনুসারে, ইনস্টিটিউট, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেলা সদর হাসপাতাল মিলিয়ে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা রয়েছে ৫২,৮০৭টি। সে হিসাবে আইসিইউ শয্যা থাকার কথা ৫ হাজারের বেশি। ন্যূনতম ধরলেও প্রয়োজন ২,১৪২টির। এর বিপরীতে এখন রয়েছে মাত্র ২১১টি, যা মোট শয্যার ১ শতাংশেরও কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আইসিইউ শয্যার প্রকট সংকট রয়েছে দেশের সব হাসপাতালে। অনেক হাসপাতালেেএকটিও আইসিইউ শয্যা নেইও। সরকারি ৩০টি মেডিকেল ও একটি ডেন্টাল কলেজের মধ্যে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ১৩টিতে।
চিকিৎসকেরা জানান, গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউএর দরকার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিউরো রোগীদের জন্য এ ধরনের শয্যার প্রয়োজনীয়তা বেশি।
মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসেন বেশি। হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আইসিইউ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ক্রিটিক্যাল রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হয়। এর ফলে পথেই অনেক রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে থাকে। আইসিইউ ও প্রয়োজনীয় সাপোর্ট থাকলে জেলা হাসপাতালগুলোতেও অনেক জটিল রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হত।
জেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংকটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ একেবারে নামমাত্র। তবে আইসিইউ বেড বাড়নো হচ্ছে। আরও ৫০০ থেকে ৬০০ আইসিইউ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় আইসিইউ ও এইচডিইউ সেবার ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে আইসিইউ চালানোর মতো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ও নার্স সংকট দূর করার পরিকল্পনাও চলছে।
হাইকোর্টকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী,পটুয়াখালী, জামালপুর, রাঙ্গামাটি, নেত্রকোনা, নওগাঁ,মাগুরা, চাঁদপুর ও হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আইসিইউ ও সিসিইউ বেড স্থাপন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।