মরিশাসে জাহাজ ভেঙে সমুদ্রে হাজার টন তেল, প্রবালপ্রাচীরের অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা
সমুদ্রে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে একটি বিশাল মালবাহী জাহাজ। আর তাতে থাকা জ্বালানি তেল মিশছে সমুদ্রের পানিতে। এমনই একটি ভিডিও সম্প্রতি সামনে এসেছে। এটি দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসের সৈকতের কাছের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবিদরা। এই সংক্রান্ত কয়েকটি ছবি, ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দুর্ঘটনার পরে জাহাজটি থেকে তেল ছড়িয়ে পড়া আটকানোর বিষয়ে মরিশাসের সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডুবতে বসা জাহাজটি মাঝ বরাবর প্রায় দু' টুকরো হয়ে গিয়েছে। আর তা থেকে তেল গিয়ে মিশছে সমুদ্রের পানিতে। আশপাশে আরও অন্তত দু'টি ছোট জাহাজ দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত সেগুলো উদ্ধার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে ক্যামেরাবন্দি করা এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জাহাজটি যেখানে ডুবছে তার কিছুটা দূরেই সৈকত।
জাপানি সংস্থা নাগাসাকি শিপিংয়ের 'এম ভি ওয়াকাশিও' নামের জাহাজটি গত ২৫ জুলাই একটি প্রবালপ্রাচীরে আঘাত করে। প্রায় ৪ হাজার টন তেল নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ব্রাজিল যাচ্ছিল সেটি। কয়েক দিনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি থেকে অন্তত এক হাজার টন তেল ছড়িয়ে পড়ে ওই অঞ্চলে। তাতে প্রবল বিপদের মধ্যে পড়ে ভারত মহাসাগরীয় ওই অঞ্চলের সমুদ্রপ্রাণ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানায় মরিশাস। সাহায্য পাঠায় ফ্রান্স ও কানাডা। বিশেষজ্ঞ দল পাঠায় জাপানও। ডুবন্ত জাহাজ থেকে প্রায় ৩ হাজার টন তেল বার করে নেওয়া হয়। ফলে জাহাজে ফাটল দেখা দেয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের চাপে সেই ফাটল বাড়তে থাকে। জাহাজটিতে জ্বালানি হিসেবে প্রায় তিন হাজার টন তেল ছিল।
ছয় আগস্ট থেকে জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্কের একটি অংশ থেকে থেকে প্রায় হাজার টন তেল সমুদ্রে মিশছে। সমুদ্র থেকে সেই তেল যতটা সম্ভত পরিষ্কার করা চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দু'খণ্ড হয়ে যাওয়া জাহাজটিকে বিশেষ স্থানে টেনে নিয়ে গিয়ে ডোবানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ভাঙা জাহাজের বড় টুকরোটিকে সে দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরেও কেন দেরি করে তার জ্বালানি তেল সরানোর কাজ হল, তা নিয়ে মরিশাস সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে আরম্ভ করে। যদিও সরকারের দাবি, খারাপ আবহাওয়ার জন্য তেল সরানোর কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি।
এদিকে জাহাজটি কী ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল, তা নিয়ে জাপানি সংস্থাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আর মরিশাস সরকার ওই কোম্পানির কাছে আবার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। পরিবেশবিদদের দাবি, ওই এলাকায় প্রবালপ্রাচীরের যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হবে না।
জাহাজের ভারতীয় ক্যাপ্টেন গ্রেফতার
এদিকে মরিশাসের উপকূলে ডুবন্ত তেলবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেন ও তার ডেপুটিকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে মরিশাস পুলিশ।
ধৃত ক্যাপ্টেন সুনীলকুমার নন্দেশ্বর ভারতীয় এবং তার ডেপুটি শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমুদ্রআইন লঙ্ঘন এবং অবৈধ গতিবিধির অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাদের জামিন সংক্রান্ত শুনানি হবে। তত দিন পুলিশি হেফাজতেই থাকবেন তারা।