কারফিউ শিথিল হলেও ক্রেতা নেই শপিংমলগুলোতে
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জারি হওয়া কারফিউ শিথিল হলেও রাজধানীর শপিংমলগুলোতে দেখা যাচ্ছে না ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীতে কারফিউ শিথিল ছিল। আজ শনিবারেও (২৭ জুলাই) এই সময়ে কারফিউ শিথিল থাকবে। আর করফিউ শিথিলের সময়েই শুধু খোলা রাখা হচ্ছে শপিংমলগুলো।
বিক্রেতারা বলছেন, সাধারণত বিকালের দিকে শপিংমলে ক্রেতা বেশি আসেন, আর এই সময় এখনও কারফিউ চলছে, তাই শপিংমলে ক্রেতা খুবই কম। রাতে না খোলা থাকলে ক্রেতা তেমন আসবে না।
জেন্টেল পার্ক- এর ধানমন্ডি শাখার ম্যানেজার কাওসার আহমেদ বলেন, "ক্রেতা কম। সকালের দিকে তো আর কেউ শপিংয়ে বের হয় না। শপিংয়ের সময়টাই বিকালের দিকে। দেখা যায়, দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে মানুষজন বের হয় শপিং করার জন্য। যে সময়টা পাওয়া যাচ্ছে, একেবারে খুবই প্রয়োজন যাদের সেই ক্রেতারাই আসছেন।"
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কত শতাংশ বিক্রি হচ্ছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "এখন যে বিক্রি হচ্ছে, এটা স্বাভাবিবের সময়ের বিক্রির সঙ্গে কোনো পার্সেন্টেজেই পড়বে না।"
ঢাকা শহরের সবচেয়ে পুরোনো ও ব্যস্ততম শপিং সেন্টারগুলোর একটি মৌচাক মার্কেট। মার্কেট কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন গড়ে ৫,০০০ হাজার মানুষ এই মার্কেটে আসেন। তবে শুক্রবার (২৬ জুলাই) দেখা গেলে ভিন্ন চিত্র; মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় দোকানিরা বসে খোশগল্প করছেন।
মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের মার্কেটে ক্রেতারা আসে সাধারণত বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আর কারফিউ শুরু হয়ে যায় ৫টায়। যতক্ষণ না সন্ধ্যার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারবো, ততক্ষণ আমরদের বিক্রি তেমন হবে না।"
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বিকাল ৫টায় গিয়ে দেখা যায় মার্কেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আসনার সদস্য জানান, কারফিউ শিথিলের সময় ছিল ৫টা পর্যন্ত, এজন্য ৫টার পর মার্কেট বন্ধ।
রাজধানীর নিউমার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব শপিং কমপ্লেক্স, চন্দ্রিমা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়– বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা তেমন নেই। অথচ স্বাভাবিক সময়ে শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় থাকে এই মার্কেটগুলোতে।
জুতা বিক্রেতা মোহম্মদ আপন বলেন, "দোকান খুলে রেখেছি, কিন্তু বিক্রি নেই।"
শার্ট বিক্রেতা মোহম্মদ মুন্না জানান, "নিজের খাবারের খরচ উঠেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে রাস্তা বন্ধ ছিল, সায়েন্সল্যাব ও নীলক্ষেত অবরোধ করে রেখেছিল ছাত্ররা। তখনও ক্রেতা একেবারেই ছিল না।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "আমরা এখন দোকান খুলছি ব্যবসার জন্য না, আমরা জানি এখন ব্যবসা হবে না। এটা জেনেও খুলেছি। খুলেছি দোকানের মালামাল ঠিক রাখতে। আমরা আশা করছি, আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে কারফিউ উঠে যাবে; উঠে গেলে আমরা স্বাভাবিক সময়ে যখন দোকান বন্ধ করতাম, তখনই বন্ধ করবো।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, যেকোনো প্রেক্ষাপটে দেশের সব দোকানপাট বন্ধ থাকলে একদিনেই ক্ষতি হয় অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার। তবে এবার কতো ক্ষতি হয়েছে, সেটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন বলে জানান মো. হেলাল উদ্দিন।