যেসব শর্তে জামিন পেলেন মিন্নি
গণমাধ্যমে কথা না বলা শর্তে বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়মিত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিুজর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল নিস্পত্তি করে এই রায় দেন।
এর অগে গত বুধবার মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর শুনানি গ্রহণ সম্পন্ন করেন আদালত।
আদালত বৃহস্পতিবার সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছেন, গণমাধ্যমে কথা না বলার শর্তে মিন্নিকে জামিন দেওয়া হলো। এছাড়াও তার বয়স, ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা এবং ঘটনার চাক্ষুস স্বাক্ষীর বিষয় বিবেচনা করে এই জামিন দেওয়া হলো।
রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের মামলায় এক নম্বর সাক্ষী মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা পুলিশ লাইনে নেওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দী নেওয়া হয়। জবানবন্দীর বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার গণমাধ্যমে যেভাবে ব্রিফিং করেছেন তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদালত।
কোনো মামলা তদন্ত বা কোনো ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বা সদস্য কিভাবে ব্রিফিং বা কোন বিষয়ে কতটুকু কথা বলতে পারবেন, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করার সুপারিশ করেছেন হাইকোর্ট। এজন্য স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আদালত।
এছাড়াও আদালত বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্রিফিং এর বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের একটি রায় রয়েছে। সে রায়ের নির্দেশন মেনে চলার কথা বলেছেন আদালত।
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, “আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে সংক্ষিপ্ত আদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করেছেন আদালত। মিন্নিকে জামিন দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিলেন, এঠি একটি ঐতিহাসিক রায়।”
তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন, জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন। আর এই সময়ে মিন্নি গণমাধ্যমের সামনে কোনো কথা বলতে পারবেন না।”
মিন্নির জামিন হওয়ার পর আদালতে উপস্থিত তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, চক্রান্তের অবসান হবে।”
মিন্নির পক্ষে হাইকোর্টে আইনী লড়াই করেনে অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন। অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে গত বুধবার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বক্তব্য দেন।
বুধবার শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী আদালতকে বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। টিভিতে দেখেছি, মিন্নির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত করার অভিযোগ নেই।
তিনি বলেন, “মেয়েটির বয়স কম। বলা হচ্ছে ১৯ বছর। ভালভাবে পরীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে ১৮ বছরের কম। তাছাড়া মেয়েটি তার স্বামীকে হারিয়েছে। তাই এ পর্যায়ে তাকে জামিন দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্থ হবে বলে মনে করি না। তাকে জামিন দেওয়ার স্বপেক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে।”
তিনি বলেন, সে যদি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতও থাকে, তবে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদালত তার সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছেন, “যেহেতু এই মামলায় তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, তাই এখানে মিন্নি কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তাই তাকে জামিন দেওয়া হলো।”
হাইকোর্ট গত ২০ আগষ্ট এক আদেশে মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং এসপিকে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরগুনার পুলিশ সুপার গত ১৮ জুলাই করা সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দেন বুধবার। তবে তিনি ঠিক কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা জানা যায়নি। আদালতের দুই বিচারপতি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তা দেখেছেন। মিন্নির আইনজীবী সেটা দেখতে চাইলে তাকে তা দেখতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন।
এরপর ১৮ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে বেঞ্চে জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। পরদিন এ বিষয়ে আংশিক শুনানি হয়।