সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও আশ্রয় খুঁজছেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পালিয়ে দিল্লির হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টা পরও তার চূড়ান্ত গন্তব্য এখনও অনিশ্চিত।
সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্য তাকে আশ্রয় দেওয়ার সম্ভাবনা কম। শেখ হাসিনা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং তার পরিবার যেখানে বাস করে অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড এবং ভারতের মতো দেশকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বিভিন্ন ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, শেখ হাসিনা বর্তমানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় একটি "সেফ হাউজে" অবস্থান করছেন।
যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের অভিবাসন আইন যুক্তরাজ্যের বাইরের লোকেদের আশ্রয় বা অস্থায়ী আশ্রয় দাবি করার অনুমতি দেয় না। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থী নিরাপদে প্রথমে যে দেশে পৌঁছায়, সেখানে আবেদন করা উচিত; যেটি এই ক্ষেত্রে ভারত। শেখ হাসিনা নিয়মিত যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কিনা সে বিষয়ে কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
দিল্লিতে পৌঁছানোর পর হাসিনা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একই বিমানে সরাসরি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক একজন লেবার এমপি এবং লন্ডনের ট্রেজারির অর্থনৈতিক সচিব। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বিবৃতিতে শেখ হাসিনার অনুরোধের প্রতি গুরুত্ব দেননি এবং তার পরিবর্তে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্য সরকার বিএনপি সমর্থকদের সম্ভাব্য চাপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যদিও সেখানে বেনজীর ভুট্টোর মতো নির্বাসিত পাকিস্তানি নেতাদের বসবাসের অনুমতি অতীতে দেয়া হয়েছে।
ইউরোপে শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে ভ্রমণের কথা বিবেচনা করতে পারেন, যেখানে তার ভাগ্নে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক থাকেন। তবে ফিনিশ রাষ্ট্রপতির কার্যালয় তার সম্ভাব্য অনুরোধের বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় থাকেন। তিনি এর আগে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারে ভূমিকার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। হাসিনা এবং বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক টানাপোড়েন হয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরে এবং হাসিনা পশ্চিমা সরকারকে বাংলাদেশে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করার দায়ে অভিযুক্ত করার পরে।
শেখ হাসিনা মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার পর থেকে সম্ভবত তার সরকারী ভিসা আর 'বৈধ' নয়।
মোদি সরকার এবং হাসিনা প্রশাসনের মধ্যে অতীতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তার (হাসিনা) ভারতে থাকা নয়াদিল্লির জন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের সাথে নয়াদিল্লির শক্তিশালী কৌশলগত এবং বাণিজ্য অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং হাসিনার উপস্থিতি ভারত সরকারের জন্য ন্যায্যতা প্রমাণ করা কঠিন করে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি নতুন বাংলাদেশ সরকার তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করে।
ভারত এর আগে শ্রীলঙ্কার সাবেক রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসের মতো অন্যান্য পলাতক নেতাদের আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। উপরন্তু হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া তার সমর্থকদের কাছ থেকে আরও আশ্রয়ের অনুরোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হতে পারে।
যতক্ষণ না শেখ হাসিনা তাকে গ্রহণ করার জন্য অন্য একটি দেশ খুঁজে পান, ততক্ষণ নয়াদিল্লি তাকে আতিথ্য দেবে, যেমনটি ১৯৭৫ সালে তার পরিবারকে হত্যার পর তাকে দেয়া হয়েছিল।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়