নতুন আইজিপির দুঃখপ্রকাশ, ‘জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন করে সব শুরু করতে চাই’
আন্দোলনের সময় পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নবনিযুক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম। একইসঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে দায়িত্বে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।
'কিছু উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তাদের অত্যধিক বলপ্রয়োগের ফলে সাধারণ মানুষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য উভয়েরই মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রটোকল মেনে চলতে তাদের ব্যর্থতা মানবাধিকার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে' — আজ বুধবার (৭ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি।
এ দিন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ বাহিনীর জন্য ১২টি নির্দেশনার কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এসব আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
'আন্দোলনের সময় পেশাগতভাবে আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী,' সংবাদ সম্মেলনে বলেন আইজিপি।
এ সময় তিনি পুলিশকে আরও নাগরিককেন্দ্রিক বাহিনীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির সংস্কার শুরুর ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ময়নুল ইসলাম প্রথমে প্রশ্ন নিতে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে জড়িত কর্মকর্তারা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এসব কর্মকর্তাকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ বাহিনীর জন্য ১২টি নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে বাহিনীর শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিওএম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএনস), সকল মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইনস, অন্যান্য পুলিশ স্থাপনাসহ বিশেষায়িত সকল পুলিশ ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোর্সের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে;
২. ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজারবাগ পুলিশ লাইনস পিওএম, এপিবিএনস, সকল মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইনস, সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিশেষায়িত সকল পুলিশ ইউনিটের সকল অফিসার এবং ফোর্সকে আগামী ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো;
৩. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্স স্ব-স্ব ইউনিটের পুলিশ লাইনসে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো;
৪. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশনস কন্ট্রোল রুম সক্রিয় করা, দায়িত্ব বণ্টন করা এবং সারাদেশের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে;
৫. ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
৬. জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের দাফন/সৎকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে;
৭. পুলিশের সকল অস্ত্র-গুলির হিসাব, খোয়া/হারানো অস্ত্র-গুলির হিসাব, সিসিসহ সকল সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে;
৮. সকল অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গার্ড অতিসত্বর মোতায়েন করতে হবে। সিনিয়র অফিসার কর্তৃক পুলিশ রেগুলেশনস অনুযায়ী অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা, অস্ত্র-গুলি ইস্যু ও জমা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধকরণের বিষয়ে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
৯. মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারগণ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। বর্ণিত কমিটি থানা এবং থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে;
১০. থানার সকল অফিসার ও ফোর্সের ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা অস্ত্র-গুলি স্ব-স্ব পুলিশ লাইনসে/নিকটস্থ অস্ত্রাগারে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো;
১১. বাংলাদেশ পুলিশের সকল সমিতি এবং এসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে; এবং
১২. বাংলাদেশ পুলিশের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সকল স্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য কর্তৃক মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত, দলীয়, ব্যাচ, সমিতি, এসোসিয়েশনসমূহের ব্যানারে পুলিশের কার্যক্রম সংক্রান্তে কোন প্রকার বিবৃতি, দাবী, মন্তব্য বা প্রত্যুত্তর প্রদান করতে পারবেন না।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।
পুলিশ সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানান।