হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছে কে?
ছাত্রদের আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভবনের ছাদ থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয় বিক্ষুদ্ধ জনতার কাছে কোণঠাঁসা হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের দিকে। পরবর্তী কয়েকদিনেও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে হেলিকপ্টার থেকে এভাবে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যাতে অন্তত দশজন শিশু-ও নিহত হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব তাদের এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিছু জায়গায় নিয়ে গিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য হেলিকপ্টার থেকে শুধু টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে।
সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হেলিকপ্টার থেকে আগুন নেভাতে পানি ছেটানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা হয়নি।
র্যাবের এয়ার উইং ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এই বেল ৪০৭ হেলিকপ্টার। এ ধরনের দুটি হেলিকপ্টার রয়েছে র্যাবের।
এরমধ্যে একটি হেলিকপ্টার কারিগরি ত্রুটির কারণে অচল ছিল। অন্যটি ব্যবহার করা হয় ছাত্র আন্দোলন দমনে। এই হেলিকপ্টার দিনভর উড়তে দেখেছেন বিক্ষোভকারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকী সন্ধাবেলাতেও টহল দিয়েছে আকাশে। আর তা চলেছে ছাত্রজনতার গণ-আন্দোলনের পুরো সময়টাতেই।
বেসরকারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে প্রথমবার হেলিকপ্টারটি ব্যবহারের ঘটনার সাথে ঘটনাক্রমে সংশ্লিষ্ট হচ্ছেন পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। কারণ তিনি ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহ পরে– বিক্ষোভের সময় হেলিকপ্টারটি ব্যবহারের ঘটনা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় ঢাকার একটি আদালতে শেখ হাসিনা, তার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং পুলিশ, র্যাব ও র্যাবের এয়ার উইংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যামামলা করা হয়েছে।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশু নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের রুলে নিহত শিশুদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জাতিসংঘসহ আরেকটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, গত জুলাই ও চলতি মাসের শুরুর দিকে ছাত্রজনতার বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনাগুলো তদন্তে আগামী সপ্তাহেই জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশে আসছেন।
গত বুধবার (১৪ আগস্ট) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর এই প্রথম ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে বাংলাদেশে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠাচ্ছে জাতিসংঘ।