দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, সেতু ভবন এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আগুন দিয়েছিল কারা?
গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মহাখালীতে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ চরমে পর্যায়ে পৌঁছায়।
দিনব্যাপী সংঘর্ষের মধ্যেই একটি গোষ্ঠী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, সেতু ভবন এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা সহ বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা কি আসলে শিক্ষার্থী? নাকি নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা শিক্ষার্থী পরিচয় ব্যবহার করে এমনটি করেছে?
প্রত্যক্ষদর্শীরা দুর্বৃত্তদের আক্রমনাত্মক বলে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, দুর্বৃত্তদের আচরণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের চেয়ে সন্ত্রাসীর মতোই বেশী ছিল। কেউ কেউ তাদেরকে আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যারা ছাত্র আন্দোলনকে বদনাম করার চেষ্টা করেছিল।
মহাখালীতে সেদিন যেভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল
১৮ জুলাই সকালটি শান্তভাবে শুরু হয়েছিল। সকাল ১০টা নাগাদ শিক্ষার্থীরা মহাখালী মোড়ে জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতির প্রতিবাদে ব্যানার হাতে স্লোগান দিতে থাকে।
তবে শান্তি স্থায়ী হয়নি। এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপস্থিতিতে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ায় পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। একসময়ের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। যে ছাত্ররা প্রাথমিকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল তারা ইট ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়।
শিক্ষার্থী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় মহাখালীর রাজপথ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় এবং আন্দোলনকারীরা জ্বালানো আগুনে বাতাস ঘন হয়ে। ফলে কোনো কিছু দেখা বা শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।
সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার এবং ইটপাটকেলের ধ্বংসাবশেষ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে একটি বিভীষিকাময় দৃশ্য তৈরি করে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইট-পাটকেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও পথচারী আহত হয়।
দিনভর সাংবাদিকরা ঘটনা কভার করতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন। তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় এবং বিশৃঙ্খলায় একজন সাংবাদিক আহত হন।
আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক উভয়ের থেকেই প্রতিকূল আচরণ সাংবাদিকদের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করে।
মহাখালী ফ্লাইওভারে নিরাপদ অবস্থানে থেকে সাংবাদিকরা বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে একটি ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পান। তারা দেখেন, তিতুমীর কলেজের কাছে ধোঁয়ার একটি বিশাল ঢেউ উঠছে, যা একটি বড় অগ্নিসংযোগের সংকেত দিচ্ছে।
বিশৃঙ্খলার মধ্যেই এই প্রতিবেদক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে [একটি উল্লেখযোগ্য অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল] পৌঁছাতে সক্ষম হন।
কাছাকাছি একটি বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাথমিকভাবে কথা বলতে না চাইলেও তারা পরবর্তীতে জানান, একটি ছোট দল বিল্ডিংয়ের সামনে একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে, যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আরও আন্দোলনকারীরা এগিয়ে আসার সাথে সাথে সহিংসতার ভয়ে, তারা প্রতিবেদককে চলে যাওয়ার আহ্বান জানায়।
নিরুৎসাহিত প্রতিবেদক আগুনের আরও কাছাকাছি চলে যান এবং ছবি না তোলার জন্য ভিড়ের সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও জ্বলন্ত বিল্ডিংয়ের ছবি ধারণ করেন।
ভিড় ক্রমশ উত্তেজিত এবং আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীর চেয়ে রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করতে থাকে। এসময় কোনো ছবি বা ভিডিও তোলা যাবে না বলে জোর করা হয়।
এক ঘণ্টার মধ্যে বনানীর সেতু ভবনসহ আরও একটি অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও প্রতিকূল ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হন।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে কারণ তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ আগের শিক্ষার্থী আন্দোলনের পুরো উল্টো ছিল।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এই প্রতিবেদকের কাছে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা ছাত্র আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য এটি করছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। বনানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা অগ্নিসংযোগের আরেকটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
লাঠি হাতে একদল ব্যক্তি, যাদের মধ্যে কয়েকজন মধ্যবয়সী ছিল, তারা একটি ব্যারিকেড তৈরি করে রাস্তা অবরোধ করে এবং বাড়ি ফেরার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের আটকে রাখে।
আগুন এবং সহিংসতা পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। অনেকেই আটকা পড়েছিল এবং কীভাবে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা নিয়ে নিশ্চিত ছিল না।
একটি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা আরও তীব্র হয়, যা এলাকায় ভয় ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিবেদক সংঘর্ষ এড়াতে তার সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে দূর থেকে কিছু ছবি ধারণ করতে সক্ষম হন। রাত ১১টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।