২৫ টন সালফার মজুত থাকায় গাজী টায়ার কারখানার আগুন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে: ইউএনও
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানায় ২৫ টনের বেশি সালফার মজুত থাকার ফলে আগুন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মো. আহসান মাহমুদ রাসেল।
তিনি টিবিএসকে জানিয়েছেন, "উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না"
আগুন নেভাতে কত সময় লাগতে পারে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কোনো কর্মকর্তা। তবে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগুন পুরোপুরি নিভতে আরও ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের ঐ কর্মকর্তা আরও জানান, আগুন পুরোপুরি না নেভার আগ পর্যন্ত কোনো উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়।
ইউএনও আরও বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলার ফলে ভবনটি বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, "এর প্লাস্টার খসে পড়ছে। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। তাহলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এজন্য অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে।"
নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয় প্রশ্ন করা হলে ইউএনও বলেন, "কেউ নিখোঁজ রয়েছে— সে সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলাও যাচ্ছে না।"
ইউএনও আরও জানান, কারখানার পুরো এলাকায় নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে।
গতকাল বিকেল থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা পোড়া কারখানার বাইরে জড়ো হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গত রাতের ঘটনার পর থেকে তাদের স্বজনদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিসের একজন সদস্য জানিয়েছেন, "কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন তাদের আত্মীয় নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। আমরা তাদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার নোট করে রেখেছি। তবে সেই সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হবে না। আগুন নেভানোর পর উদ্ধার কাজ শুরু হলে তখন বোঝা যাবে।"
তবে দিনের শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জানিয়েছিলেন, কারখানাটি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। তিনি বলেছিলেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেইয়াল থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে। আমরা সবাইকে ভবন থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করছি, অন্যথায় আরও হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।"
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ফায়ার সার্ভিস এখনও মৃত বা নিখোঁজদের কোনো তালিকা তৈরি করেনি।
তিনি বলেছিলেন, "আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো আগুন নেভানো। ভবনে প্রবেশ করে আমরা জানতে পারব, কেউ মারা গেছে কিনা। মৃতদের উদ্ধার করতে আমরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করব। কিন্তু এখনও কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। আপনি [সাংবাদিকরা] কোথা থেকে তালিকাটি পেলেন জানি না। আপনাদের সেই তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।"
বিভিন্ন মিডিয়া যেমন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড আগেই প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, অন্তত ১৭৩ জন নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে ফায়ার সার্ভিস একটি তালিকা তৈরি করেছে।
পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা মৃত বা নিখোঁজদের কোনো তালিকা তৈরি করেনি, যা কিছু গণমাধ্যম যেমন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "কিছু গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিস মৃতদের একটি তালিকা তৈরি করছে। এটি সঠিক নয়। ফায়ার সার্ভিস মৃত বা নিখোঁজদের কোনো তালিকা তৈরি করছে না। এমন খবর পরিবেশন না করার অনুরোধ করছি,"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "কিছু স্থানীয় মানুষ তাদের ফোন নম্বর আমাদের দিয়েছেন যাতে আমরা কোনো ভিকটিম পেলে তাদের জানাতে পারি,"
বিকেলে সংস্থা থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, তারা মৃত বা নিখোঁজদের কোনো আনুষ্ঠানিক তালিকা তৈরি করেনি এবং মিডিয়া সংস্থাগুলোকে এমন তথ্য প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিখোঁজ হওয়া কেউ তাদের কর্মী বা শ্রমিক নয়। তারা হয়তো লুটপাটের সময় বা অন্য কোনো কারণে ভবনে প্রবেশ করেছে।
রাতে অনেক পরিবার তাদের আত্মীয়দের খুঁজতে কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের ধারণা, তারা ভবনের ভেতর আটকে আছে।
নিখোঁজ জনির (২৫) জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তার মা ও বোন মনি। মনি বলেন, গতকাল রাত দশটায় চার বন্ধু মিলে এখানে আগুন দেখতে আসে। পরে তাদের তিনজন বন্ধু অতি উৎসাহিত হয়ে আগুন লাগা বিল্ডিং ছাদে উঠে যায়। তারপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেই।
খাইরুন নেসা বলেন তার ছেলে আমিরুল (১৮) গতকাল রাত ৯টা থেকে নিখোঁজ।
কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, গাজি টায়ারের কোনো কর্মচারী আটকা পড়েনি।
তিনি বলেন, "প্রতিদিন এখানে ১,৭০০ থেকে ২,০০০ কর্মচারী কাজ করে। আমাদের কোনো কর্মচারী ভেতরে আটকা পড়েনি বা নিখোঁজ নেই। ৫ আগস্ট থেকে পুরো কারখানা বন্ধ রয়েছে।"