চসিকের সম্পত্তির ভাড়া-ইজারা মূল্য কম হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি, পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ
চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের এসএন মার্কেটের পাশের শপিং কমপ্লেক্সে ২২টি দোকান রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মালিকানাধীন। প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৮ টাকা ২৫ পয়সা হিসেবে ছোট ছোট স্টলগুলোর মাসিক ভাড়া পড়ে ৩৭৫ টাকা।
অথচ অন্যদিকে, আশেপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন একই আকারের দোকানগুলোর ভাড়া ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বা এরচেয়েও বেশি।
শুধু এমন কয়েকটি দোকান নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৩,৫০০ দোকান রয়েছে। এসব দোকান, এসব দোকানের বিপরীতে অগ্রিম এবং উন্নয়ন ফি নেওয়া সত্ত্বেও শপিংমলের স্টলগুলোর প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ১০ টাকারও কম।
চসিকের কর্মকর্তা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের খাতিরে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে দোকানগুলো ভাড়া দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। এতে সংস্থাটির রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ফলে এসব দোকান ও সম্পত্তির ভাড়া–ইজারা মূল্য পুনঃমূল্যায়নের চিন্তা করছে সিটি কর্পোরেশন। আয় বাড়ানোর তাগিদে গত বুধবার অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
চসিকের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরজুড়ে সিটি কর্পোরেশনের ৭০টিরও বেশি মার্কেট, বাজার, শপিংমল আছে। এরমধ্যে হাতেগোনা ৫–৬টি বন্ধ রয়েছে। বাকিগুলো চালু রয়েছে। এরমধ্যে রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, শাহ আমানত মার্কেট আকারে বড়।
এর আগে ৫ বছর পর এসব ভাড়ার চুক্তি নবায়ন হতো; ভাড়া বাড়ানো হতো ১০ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সময়সীমা ৩ বছর করা হয়। তবে এটি বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম।
ভাড়া বাড়ানোর পরও জহুর হকার্স মার্কেটের প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ৪.১৩ টাকা, অমর চাঁদ রোড মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার হকার্স মার্কেটে ৮.২৫ টাকা, আব্দুল আলী শপিং আর্কেড কাঁচা বাজারের প্রথম তলায় ৮.২৫ টাকা ও দ্বিতীয় তলায় ৬.৫০ টাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজারের চান্দিনা ভিটিস্থ মার্কেট ৩.৭৫ টাকা, ফকিরহাট চান্দিনা ভিটি ৩.৭৫ টাকা, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় ৯.০৫ টাকা, দ্বিতীয় তলায় ৭.৫৬ টাকা, আন্দরকিল্লার মোমিন রোড শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় ৯.৬২ টাকা ও দ্বিতীয় তলায় ৫.৫০ টাকা, শাহআমানত চসিক সুপার মার্কেটের নিচ তলায় ৮.২৫ টাকা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ৫.৫০ টাকা এবং চতুর্থ তলায় ৪.৮১ টাকা, বিবিরহাট গরু বাজার সংলগ্ন মার্কেটে ৬.৮৭ টাকা।
চসিকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় ছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকার মতো। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০১ কোটি টাকারও বেশি। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ১১৫ কোটি টাকারও বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বুধবার সংস্থাটির সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন বলা হয়, সম্পত্তি থেকে আয় পুনঃমূল্যায়ন করলে এ খাত থেকে আয় ১৫০-২০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে।
চসিকের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চুক্তিগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। সেখানেই বলা আছে, ভাড়া বৃদ্ধির অনুপাত। যেমন— দামপাড়ায় ১৯৯৭ সালে প্রাইম ব্যাংক নিজ খরচে সিটি কর্পোরেশনের জমিতে ভবন করেছিল। ওই সময় সিটি কর্পোরেশনকেও ৯৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ৯৯ বছরের জন্য চুক্তি আছে। তবে দোকান ভাড়াসহ স্বল্প মেয়াদী অন্যান্য চুক্তিগুলো পর্যালোচনার কথা এসেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হবে।"
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "সমন্বয় সভায় দোকান ভাড়া বা ইজারা থেকে আয় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা সেটির বিষয়েও মতামত এসেছে। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পর্যালোচনার জন্য।"
আন্দোলনের কারণে রাজস্বে ভাটা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাই মাসের মধ্যভাগ থেকে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর কারফিউ, সরকার পতনসহ একমাসের অচলাবস্থায় চসিকের রাজস্ব কমেছে।
এরমধ্যে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে থাকায় প্রভাব পড়েছে।
প্রধান নির্বাহীকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
চসিকের তথ্যমতে, রাজস্ব আয়ের ৯টি খাত রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে প্রথম দেড় মাসে সব খাতেই আয় কমেছে।
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় কর কর্মকর্তাদের গত বুধবার চিঠি দিয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, "রাজস্ব আদায় কমলে বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"