স্মার্টফোন কেনার জন্য ঋণ পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দরিদ্র ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা যাতে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে স্মার্টফোন কেনার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা করে ঋণ দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঋণ প্রদানের এই কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে। ঋণের টাকাও ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোর হাতে তুলে দেবে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হাতে টাকা পেলেই তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন শুরু করবে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার ভেতরেই ঋণের এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি কিস্তি পরিশোধ করা যাবে না।
করোনা মহামারির তেমন কোনো উন্নতি না হওয়ায় 'নিউ নরমাল' পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমকে মানিয়ে নিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গরীব শিক্ষার্থীদেরকে ঋণ প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সায় দিয়েছে।"
"সরকারও এই বিষয়ে ইতিবাচক। সুতরাং আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই টাকা ছাড়ের বিষয়টি শুরু করতে পারবো।"
এদিকে, ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, "কমিশন এ পর্যন্ত ৩৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তালিকা হাতে পেয়েছে।"
"আমরা শিক্ষার্থীদের ওই তালিক বারবার যাচাই-বাছাই করছি৷ এখানে চূড়ান্ত করার পর আমরা তালিকাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো অনুমোদনের জন্য। মন্ত্রণালয় এই তালিকাটি তৈরির জন্য আমাদের গত ৬ জুন বলেছিল যাতে সব শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে।"
ইউজিসি থেকে পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন নেই, তাই তারা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব শিক্ষার্থী স্মার্টফোনের অভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না তাদের তালিকা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গত ৯ অগাস্ট ইউজিসি নির্দেশ দেয়।
এছাড়াও গত ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে সরকারকে অনুরোধ জানায় ইউজিসি৷ এ লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে চিঠি পাঠায় ইউজিসি।
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স নেটওয়ার্ক মহামারিতে সংকটে পড়া শিক্ষার্থীদের মাসে বিশেষ ভাতা হিসেবে ৩০০০ টাকা করে দেওয়ার জন্য দাবি জানায়।
ওই সংগঠনটি দেশের অন্তত অর্ধেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বৃত্তি এবং ২০০০০ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানায়।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। সরকারি এই ঋণ পাবে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। এ লক্ষে তাই সরকারকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ ছাড় দিতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঋণসুবিধা পাবেনা।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, "শিক্ষার্থীদের কীভাবে লোন দেবো এবং কীভাবে তা ফেরত পাবো সে বিষয়ে কাজ করছি আমরা। ইউজিসির এই পদক্ষেপকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখি। এটা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে।"