বাইডেন ‘নির্বোধ’ আর ট্রাম্প ‘আমেরিকান নন’: যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে জমে উঠেছে কটাক্ষের লড়াই
আগামী নভেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই উপলক্ষে নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের মধ্যে তীব্র কটাক্ষপূর্ণ বাক্যবাণ বিনিময়ের লড়াই জমে উঠেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক দিবসের ছুটির মাঝে নির্বাচনী প্রচারণার সময় দুজন পরস্পরকে আক্রমণ করতে ব্যঙ্গাত্মক বিশেষণের আশ্রয় নেন।
ভোটার জরিপে এগিয়ে থাকা বাইডেনকে অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক উল্লেখ করে তাকে একজন 'নির্বোধ' ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, নিহত মার্কিন সেনাদের প্রতি ট্রাম্প অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন- এমন অভিযোগ এনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট একজন 'আগাগোড়া অর্মার্কিনী' বলে মন্তব্য করেছেন জো বাইডেন।
ট্রাম্প অবশ্য মার্কিন গণমাধ্যম দ্য আটলান্টিকে প্রথম প্রকাশিত ওই সংবাদের কোনো ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। আটলান্টিক জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত মার্কিন সেনাদের 'হীনবল' এবং 'হেরে যাওয়ার দল' বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প অবশ্য একে সম্পূর্ণ মিথ্যে প্রচারণা হিসেবেই দাবি করেছেন সোমবার।
বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ ,এ সংবাদটি গত কয়েকদিন ধরেই তুমুল আলোড়ন ফেলেছে মার্কিন জনতার মধ্যে। গণমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদটির নানা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রাক্তন ও বর্তমান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ট্রাম্পের জন্য যে দৃঢ় সমর্থন রয়েছে, তার ভিত্তি দুর্বল করে দেওয়ার হুমকিও সৃষ্টি করেছে এটি। নির্বাচনে জিততে এই গোষ্ঠীর উপর অনেকটাই নির্ভর করবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ।
ট্রাম্প বলেন, '' শুধু সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য নয়, যারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন- তাদেরকে আমার চাইতে বেশি শ্রদ্ধা কেউই করে না।''
তার আগে সোমবার নির্বাচনী রণক্ষেত্র পেনিসেলভেনিয়ায় প্রচারণার সময়, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে উল্লেখ করেছিলেন বাইডেন।
এসময় নিজের এক ছেলে বিউ বাইডেনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিউ ডেলাওয়ার ন্যাশনাল গার্ডের একজন সদস্য হিসেবে ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর ২০১৫ সালে তিনি ব্রেন ক্যান্সারে মারা যান। বাইডেন বলেন, আমার ছেলে 'হীনবল' বা 'পরাজয়কামী' কোনটাই ছিল না। সে দেশের নায়কদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
এভাবেই বাইডেনের পেনিসেলভেনিয়া সফর দুই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এই রাজ্যটিতে দুইজনের কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে এগিয়ে নেই।
তাছাড়া, আরও কিছু অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর সমর্থনের পার্থক্য কমছে।এমন রাজ্যগুলো আর মাত্র ৬০ দিনেড় কম সময় পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অন্যতম নির্নায়ক হয়ে উঠতে চলেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারি, বর্ণবাদ নিয়ে গণ-বিক্ষোভ এবং পুলিশি নিষ্ঠুরতায় মদত দেওয়ার অভিযোগে দারুণ চাপে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিপক্ষ বাইডেন তাকে একজন 'ব্যর্থ রাষ্ট্রনেতা' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প বিভেদ আর গোলযোগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন এবং তিনি কর্মজীবী নাগরিক শ্রেণিকে পরিত্যাগ করেছেন।
এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রচারণা আবহ পরিবর্তনে বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে তীব্র শ্লেষ্মাত্মক বক্তব্য দিতে থাকেন ট্রাম্প। সকল বর্ণের মার্কিনীর জন্য তিনি কাজ করেন এবং দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেই সচেষ্ট এমন দাবি করে; তিনি নিজ সমর্থকদের ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। চাইছেন নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতেও। বিশেষ করে, পেনিসেলভেনিয়া, উইসকনসিন এবং মিশিগানের মতো সুইং স্টেট বা শেষ মুহূর্তে সমর্থন বাড়তে পারে এমন রাজ্যগুলোর মফস্বল অঞ্চলকে লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি।