ছুটির দিন: আপনার নতুন চাকরি দরকার, কীভাবে বুঝবেন?
কনফুসিয়াস বলেছিলেন, "যে কাজ তুমি ভালোবাসো, সেটি বেছে নাও; তাহলে জীবনে একদিনও কাজ করতে হবে না।" কিন্তু কথাটা বলা যতটা সহজ, বাস্তবে করা ততটাই কঠিন।
গ্যালাপের বার্ষিক জরিপ অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কর্মী তাদের কাজের প্রতি খুব একটা নিবেদিত নন। এমনকি যারা ভাগ্যবান এবং তাদের পছন্দের কাজ করেন, তারাও কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত নন।
কাজ শুধু আয়ের উৎস নয়, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা বোঝা জরুরি, কখন আমাদের পরিবর্তন প্রয়োজন; সেটা একই প্রতিষ্ঠানে নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া হোক বা নতুন কোনো সুযোগ গ্রহণ করা হোক।
এর মধ্যে সবচেয়ে সহজে চিহ্নিত করা যায় "সানডে সিনড্রোম" নামে পরিচিত লক্ষণটি। সানডে সিনড্রোম হলো এক ধরনের মানসিক চাপ বা অস্বস্তি, যা সাধারণত রোববার দিন অনুভূত হয়; বিশেষ করে সোমবার আবার কাজ শুরু করতে হবে- এই চিন্তা থেকে এ ধরনের মানসিক অস্বস্তি কাজ করে। [ইউরোপ এবং আমেরিকায় রোববার ছুটি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সাধারণত শুক্রবার ছুটির দিন।]
আমাদের মন প্রায়ই ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করে একটা বড় সময় পার করে। তাই আমরা যদি কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকি, তাহলে রোববার আমাদের জন্য খারাপ হয়ে ওঠে। কারণ সেই দিনের পরিকল্পনার বদলে আমরা আগেভাগেই সোমবারের ভাবনায় ডুবে যাই।
এই সমস্যা শুধু একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি নয় এবং এটি যা মাঝে মাঝে সবারই হয়ে থাকে। যখন আমরা "সানডে সিনড্রোম"-এ ভুগি, তখন পুরো দিনটি একটি যন্ত্রণায় পরিণত হয়। মেজাজের ওঠানামা হয়, এমনকি মাথাব্যথা বা পেটব্যথার মতো শারীরিক অসুবিধাও হতে পারে। যদি আমাদের এমন কিছু অনুভব হয়, তবে পরিবর্তনের কথা ভাবা জরুরি।
খারাপ বসদের প্রভাব আমাদের জীবনে অনেক গভীর হয়, যা বিকল্প ভাববার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই বলা হয়, মানুষ প্রতিষ্ঠান ছাড়ে না, বরং বসদের ছেড়ে দেয়। কর্মক্ষেত্রে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কিছু লক্ষণ হলো: কাজের যথাযথ স্বীকৃতি না দেওয়া, ক্রমাগত অতিরিক্ত কাজ চাপানো, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা এবং অন্যায্য পদোন্নতি।
এটি বিশ্লেষণ করা জরুরি– এটি কোনো সাময়িক সমস্যা কিনা, যা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি অথবা এটি আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করে কিনা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা উডি অ্যালেন বলেছেন, "কাজ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে একটি হস্তক্ষেপ; যদি এমনটি হয়, তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে সেইসব নীরব সংকেতগুলোর প্রতি যা আমাদের ভেতরটাকে খেয়ে দেয়।"
এই সংকেতগুলো আসে অনুপ্রেরণার অভাব থেকে, শেখার সুযোগের ঘাটতি থেকে এবং নতুন চ্যালেঞ্জের অভাব থাকলে। যখন কাজ আর আমাদের সমৃদ্ধ করে না, তখন এটি দেখা দেয়। কাজের সময় খুব ধীরে কাটে, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি কারণ মনে হয় আমাদের দক্ষতার অপচয় হচ্ছে। আর আমরা কেবল সপ্তাহান্ত বা ছুটির দিনগুলো নিয়ে উত্তেজিত থাকি।
নীরব কারণগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু সুস্পষ্ট কারণও রয়েছে, যা সমাধান করা কঠিন; যেমন: সহকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্ব, যারা আমাদের জীবনকে অসহনীয় করে তোলে, খারাপ বস অথবা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলা। এই ধরনের পরিস্থিতি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই বিকল্পের সন্ধানে বেশি সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
অবশেষে, স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের ব্যবসা শুরু করাও একটি বিকল্প হতে পারে। এই পর্যায়ে, সঠিক মুহূর্ত চিহ্নিত করা জরুরি।
"লিভিং উইদাউট আ বস" বইয়ের লেখক সার্জিও ফার্নান্দেজ পরামর্শ দেন, নতুন প্রকল্প ও বিদ্যমান কাজকে দুটি বিমানের মতো ভাবা উচিত। প্রথমটি যথেষ্ট উচ্চতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত অর্থাৎ পর্যাপ্ত আয় না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের সেই চাকরি ছাড়া উচিত নয়, যেটি আমাদের জীবিকা এনে দেয়।
তিনি বলেন, "যখন আমরা চাকরি ছাড়ব, তখন সেটি সুন্দরভাবে ছাড়াই শ্রেয়। যখন একটি অধ্যায় খারাপভাবে শেষ হয়, পরবর্তী অধ্যায় ভালোভাবে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।"
এটি যে কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই সংকেতগুলো চিহ্নিত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো যথাযথ উপায়ে মোকাবিলা করাও তেমন জরুরি।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়