বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ফিরলেন সৌদি টাইকুন
বিশ্বের সবচেয় উঁচু ভবন নির্মাণের প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর মাধ্যমে কাজে ফিরছেন সৌদি আরবের অন্যতম ধনী বিজনেস টাইকুন প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল।
এই সপ্তাহে জেদ্দা টাওয়ারের নির্মাণকাজ আবার শুরু হয়েছে। ১,০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতাসম্পন্ন এই টাওয়ারটি দুবাইয়ের ৮২৮ মিটার উচ্চতার বুর্জ খলিফাকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হতে যাওয়া এ টাওয়ারটির কাজ ২০২৮ সালে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এটি বিলিয়নিয়ার প্রিন্স আলওয়ালিদ ও তার কিংডম হোল্ডিং কোম্পানির জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চুক্তি। কিন্তু ২০১৭ সালে রিয়াদে রিজ-কার্লটনে একটি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটক হন আলওয়ালিদ। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ ওই অভিযানের পর বন্ধ হয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ এ সপ্তাহে একটি ভিডিও বার্তায় প্রিন্স আলওয়ালিদ বলেন, "আমরা ফিরেছি।" সেখানে তাকে তার ট্রেডমার্ক স্টাইল অ্যাভিয়েটর সানগ্লাস পরা অবস্থায় সাইট পরিদর্শন করতে দেখা যায়।
এ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই শুরু হওয়া কাজ এ প্রকল্পের কারণে সৌদি আরবকে দুবাইয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ও আর্থিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে আরেকটি রিয়েল স্টেট কোম্পানি হায়াত ঘোষণা করেছে, তারা নিওমে দুটি বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণে অংশীদার হবে। হোটেল দুটি দেশের উত্তরপশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু। ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালও পরের বছর আমালার লোহিত সাগরের একটি দ্বীপে একটি রিটজ-কার্লটন রিসোর্ট চালুর পরিকল্পনা করছে।
এদিকে তেলের রাজস্ব কমে যাওয়ার ফলে বাজেট ঘাটতি বাড়ার কারণে সরকার আগামী বছর ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা করছে। সেখানে এ ধরনের বড় প্রকল্পের ঘোষণা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে একটি বড় সিদ্ধান্ত। তাছাড়া তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বৈচিত্র্যমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরের চেষ্টায় আশা করা যায় এসব মেগা প্রকল্প অবদান রাখবে।
ওয়াশিংটনের আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রেসিডেন্ট স্কলার রবার্ট মোজিলনিকি বলেন, "সৌদিরা বুঝতে পেরেছে যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন এবং অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখা জরুরি।"
জেদ্দা টাওয়ার প্রিন্স আলওয়ালিদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পগুলোর একটি। তিনি রিয়েল এস্টেট ও ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পরে তিনি ডিজনি ও অ্যাপলের মতো কোম্পানিতে শেয়ার কিনে নিজের একটি বৈশ্বিক পরিচিতি তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্সের ক্ষমতায় আসার সময় দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ধরা পড়েন প্রিন্স আলওয়ালিদ এবং টাওয়ার প্রকল্পের অংশীদার ও প্রধান ঠিকাদার সৌদি বিনলাদিন গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তারা।
অভিযানে কয়েকশো প্রিন্স, ব্যবসায়ী এবং সিনিয়র কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রিয়াদের রিটজ-কার্লটন হোটেলে আটকে রাখা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রকাশ করা হয়নি। তবে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই সরকারের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান। দাবি করা হয় এসব চুক্তির মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রিন্স আলওয়ালিদ দুই মাসেরও বেশি সময় আটক ছিলেন। তিনি 'গোপন চুক্তির' মাধ্যমে মুক্তি পান। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছেন। এর মধ্যে সিটিব্যাংকে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
২০২২ সালে তিনি কিংডম হোল্ডিং কোম্পানির ১৬.৮৭ শতাংশ শেয়ার রাষ্ট্রের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের কাছে বিক্রি করেন। এসময় সৌদি বিনলাদিন গ্রুপের মালিকানা পুনর্গঠন করা হয়। তারা দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে সরকারের বড় অংশীদারিত্ব অর্জন করে।
কিংডম হোল্ডিংয়ের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই সপ্তাহে সৌদি বিনলাদিন গ্রুপের সাথে ৭.২ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল (১.৯ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আর এর মাধ্যমেই টাওয়ার নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই গত তিন দশক ধরে এই অঞ্চলের আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে অবস্থান করছে।
কিন্তু সৌদি আরব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তাদের আঞ্চলিক সদর দপ্তর দেশটিতে স্থানান্তর করতে আক্রমণাত্মকভাবে চাপ দিচ্ছে এবং সতর্ক করছে যে, যদি তারা তাদের কার্যক্রম সৌদি আরবে স্থানান্তর না করে, তাহলে তারা লাভজনক সরকারি চুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে।
সরকার এই সপ্তাহে জানিয়েছে, ৫১৭টি কোম্পানি তাদের আঞ্চলিক সদর দপ্তর রিয়াদে প্রতিষ্ঠার জন্য লাইসেন্স পেয়েছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের গাল্ফ অঞ্চলের রাজনৈতিক অর্থনীতির এক বিশেষজ্ঞ স্টিফেন হারটোগ বলেন, "একটি অঞ্চলে কেবল নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবসায়িক কেন্দ্র সমর্থনযোগ্য, তাই স্পষ্ট প্রতিযোগিতা রয়েছে।"
হারটোগ আরও বলেন, "ব্যবসায়িক পরিচালনার খরচ, স্থানীয় দক্ষতা, শ্রম জাতীয়করণ আইন, স্থানীয় নিয়ন্ত্রক পরিবেশ এবং সৌদি আরবের জীবনধারার প্রস্তাবনার মতো বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে যে সৌদি আরব কতটা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ব্যবসায়িক কেন্দ্র হতে পারবে।"