ইসরায়েলি সেটেলারদের সহিংসতার ভয়ে যেভাবে দিন কাটছে ফিলিস্তিনের উম্ম আল-খাইর-এর বাসিন্দাদের
ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের উম্ম আল-খাইর গ্রামের ২৯ বছর বয়সী যুবক তারিক হাথালীন রাত জেগে পাহারা দেওয়ার পর সকালে ঘুমাতে যেতে চান। কিন্তু তিনি জানেন না, একবার ঘুমালে তিনি কখনও ঘুম থেকে উঠতে পারবেন কি না।
কখনো আশেপাশের ইসরায়েলি সেটেলার (বসতি স্থাপনকারী) বা সামরিক কার্যক্রমের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে তার ফোনে বার্তা আসে। আবার কখনো তাকে ভোরবেলায় হামলা কিংবা অনুপ্রবেশের শব্দে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে জেগে উঠতে হয়।
তারিক তার চাচাতো ভাই ঈদ ও আওদাহ হাথালীনের সঙ্গে উম্ম আল-খাইরের সমাজের নেতা হিসেবে কাজ করেন। এটি একটি ছোট বেদুইন গ্রাম, যেখানে প্রায় ২০০ মানুষের বসবাস। এখানকার দক্ষিণ হেবরনের পাথুরে পাহাড়ি এলাকা এল-বারিয়ার শুকনো প্রান্তরে পৌঁছেছে, যা যুদিয়ান মরুভূমি হিসেবেও পরিচিত।
তারিক বলেন, প্রতিদিন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর আশঙ্কায় থাকেন, হয়ত তারা গৃহহীন হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, "আমরা প্রতিটি মুহূর্ত ভয়ের মধ্যে বসবাস করি।"
তিনি আরও বলেন, "আপনি জানেন না কী হবে। আপনার বাড়ির পাশের সেটেলার রাখাল আপনাকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেবে নাকি, সেটা আপনি জানেন না।"
অপ্রত্যাশিত হয়রানি, অপ্রত্যাশিত পরিণতি
জুনের শেষ থেকে উম্ম আল-খাইরে ইসরায়েলি সেটেলার কিংবা মাঝে মাঝে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একের পর এক সহিংস বা আক্রমণাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে।
এখানকার বাসিন্দাদের বাড়িতে প্রবেশ করা হয়েছে, সৌর প্যানেল ভাঙা হয়েছে, পানির সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে এবং গুলি চালানো হয়েছে। শারীরিক হামলার পাশাপাশি পিপার স্প্রে (মরিচের স্প্রে) দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির ঘটনা ঘটছে।
যখন সকালে কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে না তখন রাতের পাহারায় থাকা পুরুষরা গ্রামের কেন্দ্রে থাকা খেলার মাঠটিতে ঘুমিয়ে পড়েন।
বিদেশী সমর্থকদের দানে নির্মিত গ্রামের এই কেন্দ্রটি এখানকার ক্রমাগত হুমকি ও হয়রানির মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য এক রকম স্বস্তি বয়ে আনে।
গ্রামের বিশাল খেলার মাঠটি দখলকৃত পশ্চিম তীরের এরিয়া সি-এর ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি দুর্লভ সম্পদই শুধু নয়, ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল কিংবা পুরো দখলকৃত অঞ্চলেও সাধারণত এই ধরনের পৌর সুবিধা বা জায়গা নেই।
গ্রামের বাসিন্দাদের দিনগুলো একই রুটিনেই কেটে যায়। সকালে শিশুরা সাধারণত কোনো তত্ত্বাবধান ছাড়াই উচ্চস্বরে ও মুক্তভাবে খেলাধুলা করে, যতক্ষণ না তাদের বাবা-মা ঘুম থেকে ওঠেন কিংবা সামরিক বাহিনী বা সেটেলারদের হামলা শুরু হয়।
গ্রামবাসীরা কখন কী ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবেন, তা কখনোই জানেন না। জুনের শেষ থেকে প্রায় প্রতি দিনই সেটেলার বা সেনাবাহিনী এসেছে, কখনো আলাদা এবং কখনো একসঙ্গে।
কখনো তারা ট্রাক নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে এবং বাড়িগুলোতে হামলা চালায়। আবার কখনো ড্রোন উড়তে থাকে, যার ফলে খেলার মাঠ চুপ হয়ে যায়।
"সেনা! সৈন্য!", বলে শিশুরা উপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে। এটি এখন এতটাই নিয়মিত ঘটনা যে শিশুরাও যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের সময়েও দেখা যায়, শিশুরা সাইকেল চালাচ্ছে।
ইসরায়েলি সেটেলারদের হয়রানি অপ্রত্যাশিত সময়ে ঘটে এবং এতে হঠাৎ করে সহিংসতা থেকে অপ্রত্যাশিত পরিণতি ঘটতে পারে।
সকাল ৫টার মধ্যেই পাশের অবৈধ বসতি কারমেলের কিশোর সেটেলাররা গ্রামে তাদের ভেড়া চরাতে নিয়ে আসে।
বেদুইন হওয়ার খেলায় মত্ত সেটেলাররা
এরিয়া সি-তে থাকা সেটেলারদের আউটপোস্টগুলো একজন সেটেলারের নেতৃত্বে কয়েকজন কিশোর দেখাশোনা করে। তারা অনেক সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকা যুবকদের পুনর্বাসন প্রোগ্রামের মাধ্যমে এখানে আসেন। প্রোগ্রামগুলো ইহুদি জাতীয় তহবিলের মতো সংগঠন থেকে অর্থায়ন করা হয়।
ইহুদি জাতীয় তহবিলকে আল জাজিরার মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পিস্তল, পিপার স্প্রে এবং লাঠি নিয়ে সজ্জিত এই কিশোররা প্রায়ই শহরের একমাত্র পানির উৎস দখল করে রাখে। কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে তাদের ভেড়া নিয়ে অবস্থান করে।
এছাড়া, তারা সাধারণত নারীদের এবং শিশুদের ভয় দেখায় এবং কখনো কখনো তাদের বাড়িতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। যদিও সেটেলাররা দেখতে তরুণ, তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি গ্রামবাসীদের ভয়ের কারণ। যে কোনো ব্যক্তি তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার জন্য হুমকি হতে পারে। ফিলিস্তিনিরাও জানেন, যদি তারা কখনো প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন তবে প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের সেটেলার বা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরও হামলার সম্মুখীন হতে হবে।
এভাবে সেটেলাররা তাদের হামলা অব্যাহত রাখে।
এখানকার পানির উৎসটি বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। জুলাইয়ের শুরুতে সেটেলার রাখালরা পাইপ কেটে দেওয়ার ফলে পানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
গত জুলাই মাসের ১ তারিখে দুই ইসরায়েলি কিশোর গ্রামের একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের ভেড়ার পালকে তাদের নিজস্ব ভেড়ার পাল দিয়ে আক্রমণ করে, যা সাধারণত মালিকানা ঢেকে দেওয়ার এবং তাদের থেকে পশু চুরির একটি কৌশল।
পরিবারটির মহিলারা ভেড়াগুলোকে আলাদা রাখার চেষ্টা করলে কিশোররা লাঠিসোঁটা ও পিপার স্প্রে দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এর পরপরই শোরাশিমের নিকটবর্তী অবৈধ বসতি থেকে একজন সেটলার নেতা এসে বাতাসে লাইভ রাউন্ড ফায়ার করে।
এই হামলায় তারিকসহ ১০ ফিলিস্তিনি আহত হন এবং পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
প্রথমে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী নেতা অ্যাম্বুলেন্সটিকে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন, আহতদের মধ্যে তিনজন আসলে আক্রমণকারী।
"এটার কোনো মানে হয় না," তারিক বললেন।
উম্ম আল-খাইরের লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে নিজেরা মেষপালক ছিল। দুই বা তিন বছর আগে যখন গ্রামের অবশিষ্ট জমি এবং তার আশেপাশের এলাকাকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় ভূমি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন তাদের ভেড়া চরাতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
গ্রামের অভ্যন্তরে লেখা, 'পালগুলো একটি অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে উঠেছে।'
বেদুইন গ্রামবাসীদের ঐতিহ্য এবং জীবনধারাকে দখল করে এখন শুধু ইসরায়েলি মেষপালকরা গ্রামের চারণভূমিতে ঘুরে বেড়ায়।
'এটা কি আপনার?'
ইসরায়েলি এনজিও কেরেম নাভোটের গবেষণা অনুযায়ী, এরিয়া সি-তে সেটেলাররা ২০২২ সালের মধ্যে ৭ শতাংশ জমি দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এনজিওর প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, গত দুই বছরে ওই সংখ্যা সম্ভবত বহুগুণ বেড়েছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে হাজার হাজার অতিরিক্ত ডুনাম (শতাধিক একর বা হেক্টর) এই সেটেলাররা দখল করে নিয়েছে, যা এক সময় বেদুইনদের জমি ছিল।
সেটেলারদের সম্পর্কে তারিক বলেন, "তারা শুধু মেষপালক নয়, তারা আসলে বেদুইনদের জীবন যাপন করার চেষ্টা করছে। তারা তাঁবু নির্মাণ করে, গাধা, ঘোড়া, উট, ছাগল, ভেড়া পালে। এমনকি তারা আমাদের মতো পোশাক পরে। তারা বেদুইন গানও গায়।"
তারিক হেসে বললেন, "এটা সত্যিই মজার, কারণ এই মানুষগুলো আসলে কিছুই জানে না। তারা কেবল নকল করে।"
উম্ম আল-খাইরে প্রতিদিনের উত্তেজনা চলমান থাকলেও, শিশুরা নিজেদের ব্যস্ত রাখে। গ্রামের কেন্দ্রের বাইরে, আরাফাত নামে আট বছর বয়সী একটি ছেলে একটি খালি বাচ্চাদের গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল এবং "সবজি বিক্রি" করছিল। "আলু! তরমুজ! শসা!" বলে আরাফাত চিৎকার করছিল।
আগের দিন সেটেলাররা উম্ম আল-খাইরে এসেছিল, গ্রামবাসীদের মুখোমুখি হয়ে তাদের অভিশাপ দিয়েছিল। তাদের সাথে আরাফাতের নিজস্ব মোকাবিলা হয়েছিল। আরাফাত ২৯ জুনের কথা উল্লেখ করে বলে, কিশোর সেটেলাররা তার বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। যখন তার পরিবার তাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিশোররা পিপার স্প্রে দিয়ে পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আক্রমণ করেছিল।
আরাফাতের বাবা মুহাম্মদকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
কিন্তু সেই সাম্প্রতিক হামলার কথা উল্লেখ করার পর, আরাফাত একটি ২০ শেকেলের নোটের দিকে তাকাল, যা কাছে মাটির ওপর পড়ে ছিল, এবং সেটি তুলল। সে নোটটি ওপরে ধরে গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, "এটা কি আপনার? এটা কি আপনার?"
কল্পনার "ব্যবসা" এবং বাস্তব জীবনের "হামলা"-কে একসাথে মেশানো আরাফাত এবং গ্রামটির অন্যান্য শিশুদের জন্য সহজ হয়ে গেছে। তবে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গ্রামবাসীদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তাদের সন্তানরা রাতে সেটেলারদের আক্রমণ এবং গুলি করার স্বপ্ন দেখে ভয়ে জেগে ওঠে।
উম্ম আল-খাইর-এর পাশের বসতি কারমেল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীদের জানান, এখানকার জমিগুলো তাদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা ১৯৫০-এর দশকে কিনতে শুরু করেছিল। তাদের বাড়ি প্রথমবারের মতো ধ্বংসের নির্দেশ দেওয়া হয় ১৯৯৫ সালে এবং প্রথমবারের মতো ধ্বংস কার্যক্রম ২০০৭ সালে ঘটে।
সেই থেকে এখানকার বসতি ধ্বংস করার কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলছে। গ্রামটির প্রায় পুরো অংশই ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেশী সেটেলারদের পক্ষ থেকে শত্রুতা এবং সহিংসতা ৭ অক্টোবরের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে, যখন হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণ করে এবং ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে গ্রাম থেকে নেতারা, তারিক এবং ঈদ হাথালীনসহ, তাদের পরিচিত সেটেলারদের কাছে বন্দুকের মুখে আটক হন। এই হুমকি এবং আক্রমণ ২৬ জুন থেকে তীব্র হয়েছে। ওই দিন, আইসিএ গ্রামে ১১টি স্থাপনা ধ্বংস করা হয় এবং এতে ২০ শিশু সহ ২৮ জন গৃহহীন হয়ে পড়ে।
৪০ বছর বয়সী ঈদ হাথালীন পাঁচ কন্যার বাবা। তিনি দক্ষিণ হেব্রন হিলস জুড়ে এই ধরনের ধ্বংসজজ্ঞের নথি রাখতে বছরের পর বছর সময় কাটিয়েছেন। তবে ওই দিন তার ১৮ বছরের পুরনো বাড়িটি ধ্বংস হতে দেখা তার জন্য অনেক কঠিন ছিল।
"আমি ভাবছিলাম, 'আমি কি স্বপ্ন দেখছি? না কি এটি সত্য?'" ঈদ স্মরণ করে বললেন। তিনি বলেন, "কিন্তু যখন আমি আমার চোখ বন্ধ করে আবার খুললাম, তখন বুঝতে পারলাম বুল্ডোজারের শব্দ, আমার চারপাশের সম্প্রদায়ের চিৎকার ও কান্নার মধ্যে– এটা সত্যিই ঘটছে।"
জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই
সেদিনের পরে যখন গৃহহীন পরিবারগুলো গরম গ্রীষ্মের তাপ থেকে বাঁচার জন্য একটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করতে চেষ্টা করেছিল, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেটিও নামিয়ে দেয়।
ঈদ হতাশা নিয়ে বলেন, "ইসরায়েল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্প আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে প্রথম সাহায্য দিতে পারে। কিন্তু তারা সেই মানুষদের ছায়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়, যাদের বাড়ি তারা এখন ধ্বংস করেছে।"
ঈদ এবং তার পরিবার এখন প্রতিবেশীর ধাতব স্টোরেজ শেডে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রতিদিন তিনি সেখানে যান, যেখানে তার পারিবারিক বাড়িটি এক সময় দাঁড়িয়ে ছিল। "এটা ছিল রান্নাঘর, আর এখানে আমরা ঘুমাতাম," তিনি ছেঁড়া তার এবং পিষে যাওয়া কংক্রিটের এক অনির্দিষ্ট স্তূপের উপর থেকে ব্যাখ্যা করেন।
এখন যা একমাত্র চেনা যায় তা হলো সেই কাপড় শুকানোর দড়ি, যা পরিবারটি এখনও ব্যবহার করে।
যেখানে তার এবং অন্যদের ধ্বংস হওয়া বাড়িগুলো রয়েছে, সেই অঞ্চলটিকে সামরিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
"যদি আমি আবার পুনর্নির্মাণ করতে যাই, আমি ভয় পাই যে ইসরায়েল এসে ভবনটি আবার ভেঙে দেবে," ঈদ বলেন।
তিনি বলেন, "কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই শীত আসবে, আর এখানে খুব ঠাণ্ডা পড়ে। আমি জানি না তখন কী করতে হবে।"
বাসস্থানের জন্য হন্যে হয়ে গৃহহীন পরিবারগুলো আবারও তাঁবু স্থাপন করল। কিন্তু ১৪ আগস্ট আইসিএ এসে সেগুলো ধ্বংস করে, যা নিয়ে ২০০৭ সালের পর গ্রামটির বসতি ১৮ বার ধ্বংস করা হয়েছে।
১০ আগস্টের পর থেকে জর্ডান ভ্যালির তিনটি ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়, যা ১০০ জনের বেশি লোক নিয়ে গঠিত, সেটেলারদের সহিংসতার কারণে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন; এাইন এল-হিলওয়ে, আল-ফার্সিয়া, খাল্লেত খাদের ও আল-ফারিসিয়া আল-জুবি, স্থানীয় কর্মী এবং পশ্চিম তীর সুরক্ষা কনসোর্টিয়ামের তথ্য অনুযায়ী।
উম্ম আল-খাইর গ্রামে ঈদ গ্রাম্য নেতাদের মধ্যে একজন দার্শনিক। তিনি তার সন্তানদের বলেন, সব মানুষের মানবতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি চিনতে, যার মধ্যে ইসরায়েলিরাও রয়েছে।
কিন্তু অক্টোবর থেকে তার ভবিষ্যতের শান্তির আশা আরও দূরে সরে গেছে।
এখন কারমেলের সেটেলাররাও, যারা একসময় কিছুটা বেশি মধ্যপন্থী ছিল—অন্তত ঈদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক ছিল; তারা রাতের বেলায় সামরিক পোশাকে হামলা করতে সহায়তা করে অথবা তাদের বসতির পার্শ্ববর্তী বাগান থেকে কিছু তোলার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীদের হুমকি দেয়।
'মুরগীকে নিরাপদে রাখা হয়, মানুষকে না'
ঈদ উপত্যকার দিকে তাকিয়ে ঈদ বলেন, "তাদের মুরগিগুলোর জন্য পানি, পাকা রাস্তা এবং শীতে গরম ও গ্রীষ্মে আরামদায়ক রাখতে উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ রয়েছে। কিন্তু মানুষ? সেটার অনুমতি পায় না।"
প্রতিদিন তার পরিবারকে "শুধু বাঁচার" জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেই ধাতব শেডে, যেখানে তারা এখন বাস করছে, এবং তার পাঁচটি ছোট কন্যার সহজ কিন্তু কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়: "কেন?"
"কিছু ঠিক করা কঠিন," ঈদ বলেন। "কখনও আমি হাল ছেড়ে দিই। আমি এত ক্লান্ত যে সত্যিই কিছু না করে বসে থাকতে চাই। কিন্তু আমি জীবনকে ভালোবাসি।"
মধ্যাহ্নে, যেসব দিন গ্রামটিতে আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়, উম্ম আল-খাইরের কিছু পুরুষ শুয়ে পড়েন। কিন্তু যখনই সেটেলারদের গাড়ি তাদের গ্রামে প্রবেশ করে, সবাই স্থির হয়ে যায়, সকলের চোখ তৎক্ষণাৎ আসন্ন গাড়ির দিকে চলে যায়। তারা ভাবতে থাকে, এটি কি শুধু এখান দিয়ে যাচ্ছে, না কি এটি পরবর্তী আক্রমণ?
তারিক ব্যাখ্যা করলেন, অব্যাহত অনিশ্চয়তা এবং দৈনিক শত্রুতার কারণে একসঙ্গে একাধিক কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। "আপনি আপনার দিনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার পরিকল্পনার থেকে অনেক দূরে সরে পড়েন।"
সম্প্রতি গ্রামে দুটি আসন্ন বিয়ের আয়োজন উপলক্ষ্যে উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে তরিকের ভাইয়ের বিয়েটিও অন্তর্ভুক্ত। সেই পরিকল্পনা করা মাত্র সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। "শুধু আমাদের উদযাপন করতে দাও। এরপর আমরা আবার এই কঠোর জীবন যাপন করতে প্রস্তুত হবো, যেখানে প্রতিদিন আক্রমণ এবং হামলা চলছে।"
গ্রামের কাছে আইসিএ থেকে বিয়ের জন্য একটি বিশেষ তাঁবু নির্মাণের অনুমতি ছিল। কিন্তু তাঁবু নির্মাণ শুরু হওয়ার পরের রাতে, সামরিক পোশাক পরিহিত সেটেলাররা এসে হাজির হয়। একজন আইসিএ প্রতিনিধিরা ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁবুটি নামিয়ে ফেলতে বলেন এবং বসতি সেটেলাররা সেটি খুলে ফেলতে শুরু করল। দুই দিন পর তারিক এবং গ্রামের লোকজন জানতে পারলেন, অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
"আমরা কেন বিয়ে করতে পারি না?" তরিক বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলেন। "আমরা কেন উদযাপন করতে পারি না?"
অবশেষে, গ্রামটি ছোট পরিসরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করল কমিউনিটি সেন্টারে।
'কখন এসব শেষ হবে?'
গ্রামের এই শোচনীয় অবস্থা তারিক এবং তার কমবয়সী চাচাতো ভাইদের বেদুইন গ্রামগুলোর হয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করেছে। ২০০০ সালে তারিকের বড় ভাই মুহাম্মদ পশুপালন করতে গিয়ে বসতির নিরাপত্তা রক্ষীদের নির্মম হামলার শিকার হন। যদিও তিনি বেঁচে যান, এই আক্রমণের ফলে তিনি মারাত্মকভাবে অক্ষম হয়ে যান। এর পর, ২০০৯ সালে তারিকের বাবা হৃদরোগে মারা যান।
২০২২ সালে তার প্রিয় চাচা হাজী সুলাইমান, যিনি একজন শক্তিশালী কমিউনিটি নেতা ছিলেন, তিনি গ্রামবাসীদের গাড়ি জব্দ করতে আসা একটি টো ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রাকটি সুলাইমানের ওপর দিয়ে চলে যায় এবং ১২ দিন পর তিনি মারা যান।
"তিনি খুবই প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। তাকে ছাড়া আমার জীবন খুব কঠিন হয়ে গেছে," বলেন তারিক। "সত্যি বলতে, আমি জানি না আমরা কীভাবে টিকে আছি।"
হাথালীন পরিবারের বর্তমান নির্বাচিত নেতা গ্রাম থেকে বাইরে থাকেন এবং যদিও তারা অবশিষ্ট গ্রামের প্রবীণদের সাথে পরামর্শ করেন, এখন এই নতুন প্রজন্মের ওপর নির্ভর করেই প্রতিদিনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা হয়।
যখন অন্য পুরুষরা, যারা সকালে পশুপালক এবং রাতে জেগে থাকতে সংগ্রাম করেন, তারা আওদাহ এবং তারিকের কাজকে সহজ করে দিয়েছেন।
রাতে পাহারা দেওয়ার সময় তারিক ভাবতে শুরু করেন, পরের বার যখন সেটেলাররা কাউকে গুলি করবে বা হত্যা করবে, তখন তা কীভাবে সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করবে; "এর প্রভাব কী হবে?"
তারিক বলেন, "কারণ দিনের শেষে, আমরা যন্ত্র নই। আমরা মানুষ। আমাদের অনুভূতি আছে। আমাদের স্বপ্ন আছে। আমাদের চিন্তা আছে। আমাদের হৃদয় আছে। আমাদের মস্তিষ্ক আছে।"
ক্রমাগত হুমকির মধ্যেই তিনি ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেন, হাস্যরস ব্যবহার করে পরিবেশকে হালকা রাখতে এবং যে কোনো উপায়ে গ্রামটিকে সচল রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, "আমি মাঝে মাঝে চাই যে আমি আমার ভাইয়ের মতো অক্ষম হই, যাতে আমি যা ঘটছে তা জানতে না পারি।"
তারিক বলেন, "আমি চাই না কিছু নিয়ে দুঃখ পেতে... কিন্তু এটি আমাদের হাতে নেই। এবং জানেন? আমি চাইতাম, যখন তারা আমার চাচাকে চাপা দিয়েছিল, তখন আমি তার সাথে থাকতাম যাতে আমি তার সাথে মরতে পারতাম।"
এমন সময় একটি মোটরসাইকেল আচমকা কাছাকাছি শব্দ করে ওঠে এবং তারিক আবারও সতর্ক হয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর, মোটরসাইকেলটি চলে যায় এবং তিনি বেঞ্চে বসে আবার পেছনে হেলান দেন।
তারিক বলেন, "আমি এক সেকেন্ডের জন্য জানতে চাই; অন্তত আমার জীবনের শেষ এক সেকেন্ডে আমি জানতে চাই, কখন এসব শেষ হবে।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়