ছাত্রলীগ নিয়ে কথা হয়েছে, কমিটি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি: কাদের
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শনিবার রাতেই এমন খবর এসেছিল কয়েকটি গণমাধ্যমে। তবে সে খবর নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্রলীগ নিয়ে দলের বৈঠকে আলোচনা হলেও কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
রোববার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের খবর, শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির বিরুদ্ধে ওঠা এন্তার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যান না ইত্যাদি অসাংগঠনিক কাজকর্মের কথা তো জানা গেছেই।
সে সঙ্গে রয়েছে কমিটি তৈরি করতে গিয়ে তাদের নানা ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িত হয়ে পড়ার অভিযোগ। জামায়াত-বিএনপিসংশ্লিষ্ট ও বিতর্কিত কিছু সদস্যের পদায়ন করেছেন তারা, এমনতর গুরুতর কথাও বৈঠকে আলোচনা হয়।
এসব নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতেই গণভবনের বৈঠকে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর এলেও তা হয়নি বলে জানালেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “কথা প্রসঙ্গে হয়তো কথা আসে। এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত আকারে কোনো কথা হয়নি। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সেটার ফোরাম ওটা (বৈঠক) ছিল না। ওখানে ইনসাইডে আমরা অনেক কথাই বলতে পারি, অনেক আলোচনাই করতে পারি।”
তিনি বলেন, “এখানে কোনো কোনো প্রসঙ্গে ক্ষোভের প্রকাশও হতে পারে বা কারও কারও রিঅ্যাকশনও আসতে পারে। কিন্তু, ‘অ্যাজ এ জেনারেল সেক্রেটারি অব দ্য পার্টি’ আমার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা ইমপ্লিমেন্টশন প্রসেসে যায়। এখানে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটতে পারে, প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আকারে কিছু হয়নি।”
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই বৈঠকে তুলেছিলেন। সেখানে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন তিনি।
ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিনা এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “কিছু কিছু ব্যাপারে তো থাকতেই পারে। যেমন, আমাদের ইলেকশনে যারা বিদ্রোহী ছিল, আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে-- এ সব ব্যাপারে তো ক্ষোভ প্রকাশ হয়। কাজেই ছাত্রলীগেরও বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত কিছু কিছু ব্যাপার আছে। সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনসার্ন থাকতেই পারে, এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে কোনো স্পেসিফিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি জানি না। কারণ ওই ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার বিষয় আসেনি।”
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষনেতা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেটা দেখতে পেয়ে আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান তাদের পরামর্শ দেন যেন তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করেন। এরপরও তারা গণভবন ত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের চলে যেতে বলেন। তখন তারা গণভবন ত্যাগ করেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ওবায়দুল কাদের গণভবন থেকে চলে যেতে বলেছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি তাদেরকে চলে যেতে বলব কেন? প্রাইম মিনিস্টারের ওখানে দেখা করতে গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নেতারা গেছে, ছাত্রলীগ গেছে। প্রাইম মিনিস্টারের বাড়িতে তারা গেছে। আমি কীভাবে বলি, তোমরা এখান থেকে চলে যাও? আসলে কিছু কিছু খবর হাওয়া থেকে পাওয়া হয়ে যায়, একটা হয় আর একটা আসে। নানাভাবে ছড়ায়। বাস্তবতাটা ভিন্ন।”
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এ ধরনের কিছু হলে আপনারা তো দেখবেনই। এ ধরনের কিছু হতে গেলে তো এটা পাবলিক স্টেটমেন্ট। ডিসিশনটা জানা যাবে, এটা তো ওপেন সিক্রেট হয়ে যাবে, তখন সিক্রেট থাকবে না।”
গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে তখনই কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও একই বিভাগের গোলাম রাব্বানিকে সাধারণ সম্পাদক করে দু’বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ বছরের ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হলে, কমিটিতে ‘বিতর্কিত’ অনেকেই অনুপ্রবেশ করেছেন দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিত একদল সাবেক নেতা-কর্মী। এ নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে ও টিএসসির ভেতরে তাদের মারধর করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও পদ-পাওয়া নেতারা।
তখন কমিটি থেকে ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অনশনে বসেন পদবঞ্চিতরা। কিন্তু এক মাসেও তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় দলীয় নেতাদের আশ্বাসে অনশনের সমাপ্তি টানেন এ নেতারা।