রাজনৈতিক নয়, শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণাধীন ২৫২ জন এসআইকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই অব্যাহতি রাজনৈতিক নয়, বরং শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'কাকে কোন স্পেসিপিক শৃঙ্খলার কারণে অব্যাহতি দিয়েছে- এটা একাডেমি বলতে পারবে। যেহেতু একাডেমি থেকে তাদের শৃঙ্খলাভঙ্গের কথা বলা হয়েছে।'
অব্যাহতির বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধাক্কা কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'না, এটা কোনো ধরনের বড় ধাক্কা না। এর থেকে আরও বেশিও বেরিয়ে যায়। অনেক সময় পুরো কোর্সও বের করে দেয়া হয়। যদি শৃঙ্খলার জন্য হয়, তবে পুরো কোর্সই বের করে দেয়া হয়। বিজিবি থেকে একবার পুরো ব্যাচই বের করে দেয়া হয়েছিল।'
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে কোনো কমপ্রোমাইজ (আপোষ) নেই। পুরো ব্যাচের মধ্যে যদি দেখা যায়, তাদের শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। তাহলে তাদের বের করে দেয়া হয়।'
উল্লেখ্য, সারদা একাডেমিতে ৮২৩ জনের ক্যাডেট এসআইয়ের (উপপরিদর্শক) মধ্যে ২৫০ জনের বেশি প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ সকালের দিকে একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, প্রশিক্ষণ চলাকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২৫২ জনকে চাকরি থেকে 'ডিসচার্জ' করা হয়েছে। এজন্য প্রত্যেকের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্থানীয় থানাগুলোতে ডেকে ওই ২৫২ ক্যাডেট এসআইর হাতে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, 'বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে ১ অক্টোবর সকাল ৭টা ২৫ মিনিট থেকে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারস ব্যাচ–২০২৩–এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এ সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহী কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত মেনু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীর প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু, আপনি উক্ত সরবরাহকৃত নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। আপনি অন্যান্য প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয়-প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন।
এ ছাড়া আপনি অন্যদের সঙ্গে হইচই করতে করতে নিজের খেয়াল-খুশিমতো প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান। একজন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই হিসেবে এরূপ আচরণ, এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলা-পরিপন্থী।
আপনার এরূপ আচরণ মাঠের সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যহত করেছে এবং অন্য প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গে উৎসাহিত করেছে মর্মে আপনার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পুলিশ পরিদর্শক মহসিন আলী (বিপি- ৬৯/৮৭০০১৫২০) বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত আইজিপি) বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।'
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'ওই অভিযোগের কারণে একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেন। আপনি নির্ধারিত তিন দিন সময়ের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করেন। আপনার দাখিলকৃত কৈফিয়তের জবাব পর্যালোচনান্তে সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আপনার উপরোক্ত শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ হিসেবে বিবেচিত সাব–ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পথে বড় ধরনের অন্তরায় ও অযোগ্যতার শামিল।'
এর আগে গত ৮ অক্টোবর এই ২৫২ ক্যাডেট এসআইকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শোকজ করা-ও হয়েছিল।
সূত্র জানিয়েছে, ঠিক সময়ে ক্লাসে যোগ না দেওয়া, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ না মানা, নিজেদের মধ্যে মারামারি, প্রশিক্ষণে ফাঁকি দেওয়া, অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ দেখিয়ে অব্যাহতি এসব প্রশিক্ষণার্থী এসআইদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, রাজশাহীতে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজও হঠাৎ অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে সারদায় ২৫০ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
পুলিশের এসআই পদে চাকরির জন্য প্রার্থীকে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয় কম্পিউটার চালানোর দক্ষতার ওপরেও। এসব ধাপ পেরিয়ে প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এরপর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থী 'আউটসাইড ক্যাডেট' হিসেবে সারদায় এক বছরের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
এবার আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচে মোট ৮০৪ জন ছিলেন। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই পাসিং আউটের পর মৌলিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসআইদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে মাঠপর্যায়ে কাজে পাঠানো হয়। সেখানে এক বছর পূর্ণ হলে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়ে থাকে।