রেকর্ড লভ্যাংশ ও ৫০০ কোটি টাকার সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ঘোষণা স্কয়ার ফার্মার
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের রেকর্ড ১১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) স্কয়ার ফার্মার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ব্যালান্সিং, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই), মূলধনী যন্ত্রপাতি ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে।
লভ্যাংশ ও নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটি ১৮ ডিসেম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে, যার জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ নভেম্বর।
কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান, স্কয়ার ফার্মার পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য কোম্পানিটি রেনাটা অনকোলজি ও অ্যাপেক্স ফার্মার মতো বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বেশ কয়েকটি উৎপাদন চুক্তি করেছে।
আর ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়মিত কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ। স্কয়ার ফার্মা প্রতি বছর মুনাফার একটি অংশ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল বিবরণী অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.৬১ টাকা—আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২১.৪১ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১২৯.৯৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৪২.০৫ টাকা দাঁড়িয়েছে।
বুধবার দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ার লেনদনে হয়েছে ২২৪.৫০ টাকায়, যা আগের সেশনের তুলনায় ০.১৩ শতাংশ বেশি।
বর্তমানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ার ধারণ করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের ওষুধ শিল্পের বাজারের আকার ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই বাজারের ৭১.৬ শতাংশ হিস্যাই শীর্ষ দশ ওষুধ কোম্পানির দখলে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের আইকিউভিআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ শিল্পে স্কয়ার ফার্মার বাজার হিস্যা প্রায় ১৮ শতাংশ।
প্রয়াত সামসন এইচ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় দেশের ওষুধের বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল।
বর্তমানে স্কয়ার ফার্মা ৮৫৮ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেক্লো।
স্কয়ার ফার্মা বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করেছে। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোম্পানিটি ওষুধ রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য বিভিন্ন ওষুধপণ্য রপ্তানি করছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪২টি দেশে স্কয়ার ফার্মার রপ্তানি বাজার রয়েছে।
১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া স্কয়ার ফার্মার পরিশোধিত মূলধন ৮৮৬.৪৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্পনসর পরিচালকরা কোম্পানিটির ৩৫.৪৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ১৫.২৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৩.৮১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৩৫.৪৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
স্টক বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্লু-চিপ কোম্পানি হিসেবে পরিচিত স্কয়ার ফার্মা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো মুনাফা দিয়ে আসছে।