কোন ভাষাগুলো শেখা সবচেয়ে কঠিন?
ভাষা অধ্যয়ন, বিকাশ ও নথিভুক্তকরণ বিষয়ক সংস্থা এসআইএল ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের প্রথম ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা হিসেবে এসব ভাষার যেকোনো একটি ভাষায় কথা বলে থাকেন। আবার অনেকেই দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে একাধিক ভাষা রপ্ত করেন।
প্রতিটি ভাষাই অনন্য। প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব শব্দভাণ্ডার ও ব্যাকরণ রয়েছে, যা ভাষাগুলোর ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য তুলে ধরে। কিছু ভাষার সঙ্গে কিছু ভাষার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। আবার কিছু ভাষা এমন রয়েছে, যেগুলো অন্যটির থেকে পুরোপুরি আলাদা।
ভাষা পরিবার
কোনো ব্যক্তির মাতৃভাষার সঙ্গে যে ভাষাটি খুব বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ, অন্য যেকোনো ভাষার চেয়ে সেই ভাষাটি রপ্ত করা ওই ব্যক্তির জন্য তুলনামূলক সহজ। তাই ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ব্যক্তির জন্য ভিয়েতনামিজ, নাহুয়াতল (মধ্য মেক্সিকোর নাহুয়া মানুষের ভাষা) কিংবা নাভাজো (উত্তর মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের ভাষা) ভাষার চেয়ে ইউরোপীয় ভাষা যেমন, স্প্যানিশ বা ফরাসি শেখাটা সহজ।
এক্ষেত্রে পরিবার-বৃক্ষ তত্ত্বের সাহায্যে ভাষার পরিবার বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যায়। পরিবার-বৃক্ষে যে ভাষার অবস্থান ইংরেজির যত কাছে, সে ভাষা রপ্ত করা ইংরেজি ভাষাভাষির মানুষের জন্য তত সহজ।
ইংরেজি জার্মানিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এ গোষ্ঠীতে আরও রয়েছে জার্মান, ডাচ, নরওয়েজিয়ান, ডেনিশ, সুইডিশ, আইসল্যান্ডিক ও আফ্রিকান্স ভাষা।
এ গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে রোমান্স ভাষা। এখানে রয়েছে ফরাসি, রোমানিয়ান, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষা।
একজন ইংরেজি ভাষার মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে জার্মানিক গোষ্ঠীর কোনো ভাষা শেখার চেয়ে এ গোষ্ঠীর কোনো ভাষা শেখা কঠিন বলে মনে করা হয়। তবে আরবির মতো সম্পূর্ণ আলাদা একটি ভাষা শেখার চেয়ে এটি অনেক সহজ।
ইউরোপীয় ভাষার আরেকটি প্রধান গোষ্ঠী হলো স্লেভিক গোষ্ঠী, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান, পোলিশ, বুলগেরিয়ান, সার্বিয়ান ও ক্রোয়েশিয়ান ভাষা।
অন্যান্য ভাষা যেমন ফিনিশ, হাঙ্গেরিয়ান ও এস্তোনিয়ান ইউরালিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। পরিবার-বৃক্ষে এগুলো ইংরেজি ভাষা থেকে দূরে অবস্থিত। ফিনিশ ও হাঙ্গেরিয়ান ভাষা অবশ্য ইতোমধ্যেই শেখার জন্য খুব কঠিন ভাষার খ্যাতি অর্জন করেছে।
ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউট র্যাঙ্কিং
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউট (এফএসআই) হলো ইউএস ফরেন সার্ভিস কমিউনিটির সদস্যদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এখানে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি প্রচারের জন্য কূটনীতিকদের বিভিন্ন ভাষা শেখানো হয়। একজন ইংরেজি ভাষার মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য একটি ভাষা শেখা কতটা সহজ বা কঠিন, তার ওপর ভিত্তি করে এফএসআই ভাষাগুলোকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরির ভাষাগুলো শেখার জন্য সবচেয়ে সহজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর সবচেয়ে কঠিন ভাষাগুলো পঞ্চম ক্যাটাগরিতে রাখা হয়।
প্রথম ক্যাটাগরিতে যে ভাষাগুলো রয়েছে, সেগুলোর কোনো একটি শিখতে ২৩-২৪ সপ্তাহ (৫৭৫-৬০০ ঘণ্টা) সময় লাগতে পারে। এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে নরওয়েজিয়ান, আফ্রিকান্স, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষা।
ইংরেজির সঙ্গে জার্মান ভাষা গভীরভাবে সম্পর্কিত হলেও এর উল্লেখযোগ্য কিছু জটিলতা রয়েছে। যে কারণে ভাষাটি ইংরেজি থেকে আলাদা এবং শেখাটাও তুলনামূলক কঠিন। আর তাই ভাষাটিকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এ ভাষা শেখার জন্য ৩০ সপ্তাহ (৭৫০ ঘণ্টা) লাগতে পারে।
ইংরেজির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যেমন মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান ও সোয়াহিলি (কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষের ভাষা) ভাষাগুলো ক্যাটাগরি তিনে রাখা হয়েছে। এ ক্যাটাগরির ভাষাগুলো শিখতে ৩৬ সপ্তাহ (৯০০ ঘণ্টা) সময় লাগতে পারে।
ক্যাটাগরি চারে থাকা ভাষাগুলো শিখতে অন্তত ৪৪ সপ্তাহ (১,১০০ ঘণ্টা) লাগতে পারে। এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে বুলগেরিয়ান, হিন্দি, রাশিয়ান, গ্রিক, চেক, থাই, ফিনিশ, এস্তোনিয়ান, তাগালগ (ফিলিপাইন), জোসা (দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের অন্যতম ভাষা), জুলু (দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম ভাষা) ইত্যাদি।
ইংরেজি ভাষার মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যাটাগরি পাঁচে থাকা ভাষাগুলো আয়ত্ব করার জন্য সবচেয়ে কঠিন ভাষা। এ শ্রেণির ভাষাগুলো শিখতে ৮৮ সপ্তাহ (২,২০০ ঘণ্টা) লাগতে পারে।
এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে চাইনিজ মান্দারিন, চাইনিজ ক্যান্টনিজ, আরবি, কোরিয়ান ও জাপানিজ। এসব ভাষার মধ্যে ভিন্ন বাক্য গঠনরীতি ও তিন ধরনের লিখন পদ্ধতির কারণে জাপানিজ ভাষাকে সবচেয়ে জটিল বলে বিবেচনা করা হয়।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক