এদেশে আমরা যেভাবে ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হলাম
গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশের খুব কম অফিসে কম্পিউটার ছিল। যেসব অফিসে কম্পিউটার ছিল, তাদের ভাবই ছিল আলাদা, যদিও তারা সাধারণত কেবল টাইপরাইটারের বিকল্প হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহার করত। সেই কম্পিউটার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হতো, যার মেঝেতে কার্পেট বিছানো থাকত এবং সেই ঘরে জুতো খুলে প্রবেশ করতে হতো। কারও সর্দি-জ্বর হলে সেই ঘরে ঢুকত না, পাছে কম্পিউটার 'ভাইরাস আক্রান্ত' হয়ে পড়ে! নিতান্ত বিত্তবান না হলে কেউ বাসার জন্য কম্পিউটার কেনার কথা ভাবত না।
ঐ সময়ে দেশে প্রথম কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (CSE) স্নাতক পর্যায়ে পড়ার সুযোগ হয়। প্রতিবছর মাত্র ৩০ জন সেই সুযোগ পেত, ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় অংশের ধ্যানজ্ঞান ছিল সিএসইতে পড়া। যারা এসএসসি বা এইচএসসিতে বোর্ডের মেধা তালিকায় থাকত, সাংবাদিকেরা তাদের জিজ্ঞেস করত, বড় হয়ে কী হতে চাও? তারা গর্বের সাথে উত্তর দিত, কম্পিউটার বিজ্ঞানী/প্রকৌশলী হতে চাই।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশে কম্পিউটার খুব দুর্লভ ছিল না, তবে খুব সহজলভ্যও ছিল না। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ক্লাসে পড়ি। সেই সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনফ্রেম কম্পিউটারে যৎসামান্য কাজ করতে পেরেছিলাম, যেখানে মাত্র তিন নাকি পাঁচ লাইন প্রোগ্রাম লেখা যায় এমন আকারের মনিটর। সেখানে একটা কাজ করে প্রিন্ট কমান্ড দিলে তিন দিন পরে কম্পিউটার ল্যাবের বিশালাকৃতির একমাত্র প্রিন্টার থেকে ডট প্রিন্টারে কাগজের রোলে প্রিন্ট পাওয়া যেত। সেখানে কাজ করে সোয়া পাঁচ ইঞ্চির ডিস্কেট অথবা সাড়ে তিন ইঞ্চির এইচডি বা ডিডি ফ্লপি ডিস্কে করে বাসায় নিয়ে আসতে হতো। সেই ডিস্কের ধারণক্ষমতা ১.৪৪ মেগাবাইট! যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ক্লাসে পড়ি, তখন কম্পিউটার ল্যাবের পিসিতে বসার সুযোগ পাই। তাতে Windows ৩.১-এর রূপ দেখে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ইন্টারনেট বলে যে কোনো বস্তু পৃথিবীতে আছে, সেটা তখনো আমার জানা ছিল না।
১৯৯৬ সালে এর-তার কাছে শুনে আর এটা-সেটা পড়ে জানতে পারলাম 'ইলেকট্রনিক মেইল' বলে একটা 'বস্তু' আছে, যেখানে কম্পিউটারে টাইপ করা লেখা খুব কম খরচে এক দেশের কম্পিউটার থেকে আরেক দেশের কম্পিউটারে পাঠানো যায় এবং যেটা ফ্যাক্সের মতো সাথে সাথে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশে এই সুবিধা আছে কি না, তখনো জানতাম না। ঐ বছরের মাঝামাঝি আমাদের ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের পাট চুকিয়ে কাজের দুনিয়ায় নামে। তখন শুনতে পাই আমাদের ব্যাচের সিএসই বিভাগের দুজন আর ইইই বিভাগের একজন আইএসএন নামের একটা ইন্টারনেট কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে। এই প্রথম ইন্টারনেট শব্দটি আমার জানার সীমার মধ্যে এল।
কাছাকাছি সময়ে আমি এবং আমার দুই সহপাঠী একই প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেই। কাজের জায়গায় দেখি দিনে-রাতে হাজারো বার বিদেশে থাকা ক্রেতা, সরবরাহকারী, জাহাজ কোম্পানি, বিমান কোম্পানি, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, অডিট কোম্পানি, বিদেশে ভ্রমণরত নিজের অফিসের সহকর্মীর সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। সেই যোগাযোগের উপায় হয় আইএসডি কল করে, অথবা ফ্যাক্স করে যা আসলে আইএসডি কলেরই নামান্তর। ওই সময়ে প্রতি মিনিট আইএসডি কলের রেট অকল্পনীয় রকমের বেশি ছিল। শুধু আইএসডি নয়, দেশের ভেতরে এক শহর থেকে আরেক শহরে কল করার এনডব্লিউডি রেটও বেশ উচ্চ ছিল। ফলে প্রতি মাসে অফিসকে বিপুল পরিমাণে টেলিফোন বিল পরিশোধ করতে হতো। আমরা তিনজন ভাবলাম, অফিসে যদি ইন্টারনেট কানেকশন নেওয়া যায়, তাহলে ইলেকট্রনিক মেইলের (ই-মেইল) মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারলে অফিসের যোগাযোগ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু তার আগে নিজেদের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে, নয়তো কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়ে রাজি করানো যাবে না।
যত দূর মনে পড়ে, ওই সময় দেশে মাত্র দুটি আইএসপি ছিল-আইএসএন এবং অগ্নি। খোদ টিঅ্যান্ডটিও (এখনকার বিটিসিএল) তখন ইন্টারনেট সার্ভিস দিত না। ইন্টারনেট কী জিনিস, সেটা কী করে কাজ করে, ই-মেইল কী করে করতে হয়, ইন্টারনেট দিয়ে কী কী কাজ করা যায় ইত্যাদি জানার জন্য আমরা আইএসএনের নিউ ইস্কাটনস্থ অফিসে গেলাম। সেখানকার লোকজনের কাজকারবার দেখে আমরা হতবাক। সবাই ব্যস্ত হয়ে একবার এই কম্পিউটার থেকে ওই কম্পিউটারে দৌড়ায়, কী করে কিছু বুঝি না। তাদের কথায় এমন সব জার্গন, যেগুলো আগে কখনো শুনিনি। Browse শব্দটির একটি অর্থ জানতাম, যেটি গবাদিপশুর সাথে সংশ্লিষ্ট, এখানে শুনি তার মানে অন্য। যা-ই হোক, ওখানে যা কিছু জানলাম, সেগুলোর ভিত্তিতে নিজেদের অফিসে এসে আমরা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। তারা হয়তো ভাবল, যেহেতু অল্প টাকার ব্যাপার, তাই একটু চেষ্টা করে দেখা যাক, যদি কাজ না করে, তাহলে পরে বাদ দিয়ে দিলেই হবে।
অতএব অফিসে আরেকটি টেলিফোন কানেকশন নেওয়া হলো, আইএসএনের কাছ থেকে ইউএস রোবোটিকসের ১৯,২০০ বিট/সেকেন্ডের ডায়াল-আপ মডেম কেনা হলো আর তাদের একটি ইন্টারনেট কানেকশন নেওয়া হলো। আমরা আমাদের কোম্পানির নামের সংক্ষিপ্ত রূপের শেষে @bangla.net যোগ করা একটি ই-মেইল ঠিকানা পেলাম। এভাবে ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে জীবনে প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পেলাম। ঘটনাক্রমে অফিসের একমাত্র ইন্টারনেট সংযোগটি আমার কম্পিউটারে দেওয়ায় আমার ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হলো।
কম্পিউটারকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি ডেটা কেবল দিয়ে মডেমের সাথে যুক্ত করতে হতো। মডেমকে আবার টেলিফোন লাইন আর পাওয়ার লাইনের সাথে যুক্ত করতে হতো। মডেমের সুইচ টিপে চালু করে কম্পিউটারে Trumpet Winsock নামের একটি প্রোগ্রাম দিয়ে dialup network-এর সাথে যুক্ত হবার চেষ্টা করতে হতো। মডেম যখন ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে থাকত, তখন অদ্ভুত এক আওয়াজ করত। সেই আওয়াজ আমার মাথায় চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। মডেমে অনেকগুলো লাল আলো জ্বলে-নেভে, যেটা দিয়ে কানেকশনের অবস্থা বোঝা যায়, একটা বিশেষ আলো লাল থেকে সবুজ হওয়ার মানে হচ্ছে কম্পিউটার ১৯,২০০ বিট/সেকেন্ডের (০.০১৯২ এমবিপিএস!) ইন্টারনেট লাইনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। কাজ শেষ হলে মডেমের সুইচ টিপে বন্ধ করে রাখা হতো। প্রতি মিনিট ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য দুই প্রকারের বিল দিতে হতো-এক, আইএসপিকে তাদের সেবা ব্যবহার করার জন্য; দুই, টিঅ্যান্ডটিকে তাদের টেলিফোন লাইন ব্যবহার করার জন্য।
ই-মেইল করার জন্য আমরা Pegasus Mail নামের একটি অফলাইন ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতাম। সেখানে ই-মেইল লিখে লিখে জমিয়ে রেখে দিনে কয়েক বার ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে সেসব পাঠানো হতো, ইনকামিং মেইল ডাউনলোড করা হতো। Pegasus Mai আমার পছন্দের জিনিস ছিল, কিন্তু অল্প দিনের মধ্যে Eudora Avi Eudora Lite চলে আসায় Pegasus Mai-কে বিদায় দিতে হয়। অফলাইন ই-মেইল ক্লায়েন্টের সেট-আপ একটু ঝামেলার জিনিস ছিল। প্রায়ই সেসব বিগড়ে যেত। তখন আইএসএনে ফোন করে তাদের কর্মীদের সহায়তায় আবার সেট-আপ করতে হতো। একসময় আমি নিজেই সেটা করতে শিখে যাই।
আমাদের ওয়েব ব্রাউজার ছিল Netscape Navigator-এর 3.X-এর ভার্সানগুলো। Internet Explorer-ও ছিল, কিন্তু তখন তার অবস্থা বিশেষ সুবিধার ছিল না। এরপর Netscape Communicator এল, কিন্তু সেটা লোড হতে অনেক সময় লাগত, তার কাজের গতিও খুব ধীর ছিল। ফলে বাধ্য হয়ে Internet Explorer ব্যবহার করতে থাকি, অবশ্য তত দিনে তার ভালো উন্নতি হয়েছিল।
আমাদের সার্চ ইঞ্জিন ছিল মূলত Yahoo! এর বাইরে Lycos, Altavista, AskJeeves-এসবও ব্যবহার করতাম। তবে Yahoo! বেশি পছন্দের ছিল। মাথায় যে শব্দ আসত, সেটা দিয়ে খুঁজতাম এবং বেশির ভাগ সময়ে কিছুই মিলত না। আমাদের ধারণা ছিল, অমুক.com লিখলেই সেটার ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেটা কখনো কখনো যে মিলত না, তা নয়, তবে বেশির ভাগ সময়ে কিছু মিলত না। তখন বয়স কম ছিল বলে নানা দেশের নানা ইউনিভার্সিটি খুঁজতাম। সেসব অবশ্য সহজে পাওয়া যেত। কোনো সাইটে অনেক ছবি থাকলে সেই সাইট আপলোড হতে অনেক সময় লাগত। ইন্টারনেটে ভিডিও দেখা তখনো সম্ভব হয়নি।
একজন খবর দিল Hotmail নামের এক জিনিস বাজারে এসেছে, যেখানে প্রত্যেকে বিনা পয়সায় ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। আমাদের আর পায় কে! সবাই যার যার নামে বা নিজের নামের কাছাকাছি কিছু একটা নামে হটমেইলের অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললাম। আজকের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব শেষ হবার আগেই যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে যায়, তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে থাকতেই অনেকে ইউএসএ, কানাডা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনার জন্য যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিত। এবং পাস করার মোটামুটি এক বছরের মধ্যে দেখা যেত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আট বিভাগ থেকে পাস করা কমবেশি ৫৬০ জনের প্রায় ৩০০ জন উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে (মূলত ইউএসএতে) চলে গেছে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে সবাই সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি করে ই-মেইল আইডি পাওয়ায় দেখা গেল আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ জনের ই-মেইল ঠিকানা আছে। অল্প দিনের মধ্যে একটি ই-মেইলের To ফিল্ডে সব বন্ধুর ই-মেইল ঠিকানা বসিয়ে মেইল পাঠানো শুরু হয়ে গেল। তখনো CC আর BCC-এর ব্যবহার জানতাম না। এভাবে চেইন মেইলভিত্তিক আড্ডা শুরু হয়ে গেল। এবং সেখান থেকে অবধারিতভাবে ঝগড়া, মনোমালিন্য, দলাদলি, ভাঙন ইত্যাদিও শুরু হয়ে গেল।
হটমেইলের পর পর Mailcity, Mailexcite, USA, AOL ইত্যাদিরাও বিনা পয়সার ওয়েবমেইল সার্ভিস দেওয়া শুরু করল। আমরা সবাই এগুলোর প্রতিটিতে এক বা একাধিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলে অনেকগুলো ই-মেইল ঠিকানার গর্বিত মালিক হয়ে গেলাম। কারও সাথে দেখা হলে বা পরিচয় হলে টেলিফোন নাম্বার বিনিময়ের মতো আমরা নিজের ই-মেইল ঠিকানা দিতাম। দেখা যেত যাদের দেওয়া হতো, তাদের বেশির ভাগ জিজ্ঞেস করতেন, এটা কী? আমাদের মধ্যের দু-একজন সরল ব্যক্তি অন্যকে ই-মেইল ঠিকানা দেওয়ার সাথে সাথে সেটার পাসওয়ার্ডও দিয়ে দিতেন। তারপর তাদের কেউ কেউ নানা হেনস্থার শিকার হয়ে পাসওয়ার্ড পাল্টাতে বাধ্য হন।
চিঠি লেখার যুগের মতো করে ই-মেইলভিত্তিক পত্রমিতালী শুরু হলো। আমার নিজেরই কানাডা, আমেরিকা, পুয়েরতো রিকো, ব্রাজিলের পত্রবন্ধু তৈরি হলো। ১৯৯৭ সালে এভাবে তৈরি হওয়া একজন পত্রবন্ধুর সাথে আমার এখনো যোগাযোগ আছে। প্রথম প্রথম কাজের জায়গায় দেখা গেল অনভ্যস্ততার দরুন কাউকে ই-মেইল করলে তাকে আবার ফোন বা ফ্যাক্স করে সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হতো। অবশ্য দ্রুত সবাই ই-মেইলে অভ্যস্ত হয়ে গেলেন। এখন অবশ্য যোগাযোগের হাজারটা উপায় হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ জন ই-মেইল চেক করতেও চান না।
cricinfo.org নামের একটি ওয়েবসাইটের খোঁজ পাওয়া গেল, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট ম্যাচের বল টু বল খবর প্রায় সাথে সাথে পাওয়া যায়। যেহেতু টেলিভিশনে সব খেলা দেখাত না, তাই আমরা এই সাইটের মাধ্যমে ক্রিকেটের খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম। ১৯৯৭ সালের মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশ যখন মালয়েশিয়াতে আইসিসি কাপ খেলতে গেল, তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন খেলা স¤প্রচার করছিল না। 'রেডিও বাংলাদেশ' (বাংলাদেশ বেতারের তখনকার নাম) খেলার চলতি ধারাবিবরণী স¤প্রচার করলেও অফিসে বসে সেটা শোনার উপায় ছিল না। ফলে এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে আমরা খেলার মোটামুটি সর্বশেষ খবর পেয়ে গেলাম। সেবার বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আইসিসি কাপ জিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান শুরু হয়।
mIRC নামের একটি ইন্টারনেট রিলে চ্যাট ক্লায়েন্ট ছিল (আসলে এখনো আছে)। সেটা দিয়ে অনলাইন চ্যাটের যুগ শুরু হলো। এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ঘটনা ঘটে গেল। ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা বিশেষ শোনা না গেলেও mIRC-এর চ্যাটের মাধ্যমে প্রেম হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটতে থাকল। এক বিয়ের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, যেখানে পাত্র-পাত্রীর পরিচয় ও প্রেমের শুরু mIRC-এর চ্যাটের মাধ্যমে। অন্য রকমের ঘটনাও ছিল। আমাদের এক পুরুষ বন্ধু আমাদেরই আরেক পুরুষ বন্ধুর সাথে নারী সেজে টানা কয়েক মাস চ্যাট চালিয়ে যায়। তাদের আলাপ 'প্রেমালাপের' দিকে মোড় নিতে থাকে। এই প্রকারের ভার্চ্যুয়াল ভুয়া নারীকে বলা হতো 'ছাইয়া' (মাইয়া থেকে ছাইয়া)। একসময়ে ছাইয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সাবধানী লোকজন পরিচয়ের গোড়ার দিকেই ফোনে কথা বলে নিতেন।
ইন্টারনেটে নানা বিস্ময়কর জিনিস দেখেছি, পড়েছি; তবে একটি জিনিস প্রথমবার ইন্টারনেটে দেখে গোটা শরীর কেঁপে উঠেছিল, সেটা বাংলায় লেখা শব্দ। আমাদের সহপাঠী তানভীর এহসানুর রহমান একদিন ই-মেইলে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে সেটি দেখতে বলল। সাইটটি কিছুই নয়, একটি পৃষ্ঠায় বাংলায় কিছু কথা লেখা। সাইটটি আমাদেরই আরেক সহপাঠী উত্তীয় চৌধুরীর বানানো। বাংলায় লেখা ওয়েবসাইট হয়তো এর আগেই অনেকে তৈরি করেছেন; কিন্তু আমার দেখা সেটিই প্রথম। বুঝলাম অন্তর্জালে বাংলা ভাষার যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।