পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক বলয়মুক্ত করতে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন
পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক বলয়মুক্ত ও স্বচ্ছ বাহিনীতে রূপান্তর করতে চাইলে, পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বতী সরকারের নৌ-পরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
একজন সিনিয়র বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন এবং এই কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট হলে 'জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক সেমিনার বিশেষ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) সেমিনারটির আয়োজন করে।
তিনি বলেন, "সরকার পতনের পর পুলিশ কর্মবিরতীতে গিয়েছিল। তখন তারা ৯টা দাবি তুলেছিল। এরমধ্যে প্রথম দাবিই ছিল পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কেননা তারা জানে, বিদ্যমান আইনে পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ কমিশন গঠন না হলে আবারও পুলিশ রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে যাবে। তাই এই দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে পুলিশ কমিশন গঠন করা খুবই জরুরি।"
তিন স্তরের নিয়োগের ফলে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, "পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া দুটি স্তরে করা উচিত। এছাড়া, অধস্তন পুলিশদের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপারদের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তঃত এক বছর থানার কাজ করার পর তাদের দায়িত্ব দেওয়ার দরকার।"
বিগত সময়ে পুলিশের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, "গত ১৫ বছরে প্রতিটি সাধারণ পুলিশে পোস্টিংয়ের জন্য এক লাখ টাকা ও ওসির বদলির জন্য এক কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে এই পরিস্থিতিতে আর কী আশা করা যায়। ফলে আমাগীর পুলিশকে একটি আদর্শিক পুলিশের বাহিনীতে রূপান্তর করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে পুলিশকে জনসাধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।"
সেমিনারের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ও পলিটিক্যাল সাইন্স এবং সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতান পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তারা বলেন, "২০১৫ সালে পুলিশের ওপর জনসাধারণের আস্থা ছিল ৪৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে মাত্র ১১.১ শতাংশে নেমে এসেছে। পুলিশ বাহিনীকে জননিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষার বাহিনী হিসেবে নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্মমতা, গুম এবং বিরোধী কথা দমনের মতো ঘটনায় জনগণের আস্থা ভেঙে পড়েছে- যা পুলিশ বাহিনীকে একটি পেশাদার ও জনমুখী সেবাদানকারী সংস্থায় পরিণত করার জন্য ব্যাপক সংস্কারকে অত্যাবশ্যক করে তুলেছে।"
পুলিশ কমিশনের রুপরেখা তুলে ধরে তারা বলেন, প্রস্তাবিত কমিশনে বিচার বিভাগ, মানবাধিকার সংস্থা, প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য, সাংবাদিক এবং তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
কমিশনের অধীনে একটি 'পুলিশ অভিযোগ শাখা' গঠন করা হবে- যা অসদাচরণের অভিযোগগুলো সমাধানের জন্য কাজ করবে। এতে পুলিশ বাহিনীর যথাযথ কমান্ড চ্যানেল বজায় রেখেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানান তারা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তাওফিক এম. হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্যানেল বক্তরা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস. এম. জহিরুল ইসলাম, পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি মাহবুব উল করিম প্রমুখ।