ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে নার্ভাস নয় ভারত
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে কোনো ভয় নেই বলে জানিয়েছে ভারত। খবর বিবিসির।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর গতকাল রোববার বলেন, "অনেক দেশই ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু ভারত সেসব দেশের মতো নয়।"
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভারতকে তিক্ত শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল, যা উভয় দেশের ব্যবসায় প্রভাব ফেলে।
ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দুই পক্ষেরই সমর্থন পেয়ে আসছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ভারত ভালোভাবেই কাজ করে এসেছে। তাছাড়া ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই দেখছে চীনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত।
গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, "ট্রাম্পের শাসনামলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি হবে না- এমন কোনো আশঙ্কা দিল্লির নেই।"
তিনি আরও বলেন, "মনে হয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ফোনকলে অভিনন্দন জানানো ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম তিনজনের একজন ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।"
তবে শুল্ক যুদ্ধ এই সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত অক্টোবরে মোদিকে একজন 'দারুণ নেতা' বলে অভিহিত করেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু তিনি অভিযোগও করেন যে ভারত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নেতার সম্পর্কের উষ্ণতা এই বাণিজ্যিক বিরোধগুলি দূর করতে পারে কিনা তা-ই দেখার বিষয়।
এর আগেও ট্রাম্প ও মোদি একে অপরের প্রশংসা করেছেন।
২০১৯ সালে টেক্সাসে ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ও মোদি দুজনই দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। সে অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিদেশি নেতার জন্য এমন আয়োজনকে সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
পরের বছর ট্রম্পের প্রথম ভারত সফরের সময় মোদি তাকে নিজের নির্বাচনী এলাকা গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সেখানে সেসময় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল।
কিন্তু পরস্পরের প্রতি এমন আয়োজনের কমতি না থাকলেও তাদের সম্পর্ক কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে।
দুই দেশের তিক্ত শুল্ক যুদ্ধের কারণে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ভারতের জন্য বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে এইচ-১বি ভিসার প্রত্যাখ্যানের হার ২০১৬ সালে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ২১ শতাংশে পৌঁছায়। আর এই ভিসার একটি বড় অংশ ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের দেওয়া হয়।
এদিকে, জয়শঙ্কর দাবি করেন যে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আসছে। তবে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলি এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, "তাদের বাজার বড়, তারা প্রযুক্তিখাতের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। সুতরাং পরিবর্তনগুলোকে আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু এগুলো নিয়ে উদ্বেলিত হওয়া যাবে না এবং অতিরঞ্জিত করা যাবে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক রাখা জরুরি।"