জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে লোকসানে বাটা, মুনাফায় অ্যাপেক্স
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আয় কমায় লোকসান করেছে বাটা শু কোম্পানি বাংলাদেশ। লোকসানের মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপ্রবাহ।
অন্যদিকে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের আয় ও মুনাফা দুটোই বেড়েছে। কোম্পানিটির দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং রপ্তানি গন্তব্য বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা তাদের জন্য ইতিবাচক হয়ে এসেছে।
বাটার কর্মকর্তারা বলেন, আন্দোলনের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হওয়ায় তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তবে বুধবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাটার শেয়ারপ্রতি দাম ০.৫৮ শতাংশ বেড়ে ৯১৭ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ারের দাম ১.২২ শতাংশ কমে ২০২.২০ টাকায় নেমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার স্থানীয় বাজারে বাটাকে পেরিয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে। কারণ, কোম্পানিটি গ্রামীণ গ্রাহকদের জন্য যৌক্তিক মূল্যে রপ্তানি মানের জুতা উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে।
এছাড়া অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পায়। কারণ, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সনদ প্রদানকারী সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের মানদণ্ড পূরণকারী মাত্র তিনটি বাংলাদেশি কোম্পানির একটি হচ্ছে অ্যাপেক্স। এই সনদ অ্যাপেক্স বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে বেশি দামে পণ্য বিক্রিতে সহায়ক হয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক বাটা স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে ব্র্যান্ডেড জুতার বাজারে তাদের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।
বাটা শু
বাটা শু-র জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি অনুসারে, এ সময়ে কোম্পানিটি ১৩ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এতে এই প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৯.৩৪ টাকা। এই লোকসান গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় অনেক বেশি।
এছাড়া বাটার আয়ও প্রায় ১৮ শতাংশ কমে ১৫৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাটা এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের পরিস্থিতির কারণে কর্মদিবস নষ্ট হওয়ায় এবং খুচরা বিক্রি কম হওয়ায় এই ক্ষতি হয়েছে।
তবে কোম্পানিটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এবং ২০২৩-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংরক্ষিত আয়ের ওপর ভিত্তি করে ৩৪০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার জানিয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তাদের আয় ২০ শতাংশ বেড়ে ৪২৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান, দেশে তাদের বিক্রি ৯ শতাংশ বেড়ে ২২১ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আর রপ্তানি আয় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২ কোটি টাকা।
এ প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা ২৬ শতাংশ বেড়ে ২.৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১.৯৮ টাকা।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব ওমর ফারুক বলেন, জুলাইয়ের অস্থিতিশীলতা এবং বন্যা সত্ত্বেও কোম্পানির স্থানীয় বিক্রি বেড়েছে, যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল। 'সারা দেশে আমাদের বিস্তৃত বিক্রয় নেটওয়ার্ক স্থানীয় বাজারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছে,' বলেন তিনি।
তবে সুদহার বৃদ্ধির কারণে মুনাফার লাভের মার্জিন কমে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রপ্তানি বাজার প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, গত বছর প্রধান প্রধান ক্রেতা, বিশেষ করে ইউরোপ ও জাপান থেকে অর্ডার কম আসায় রপ্তানি লক্ষ্য পূরণ হয়নি। 'এই বাজারগুলোতে অর্ডার কম থাকায় আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ নতুন গন্তব্যে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করেছি,' বলেন তিনি।
ফারুক আরও বলেন, 'এই নতুন বাজারগুলো থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। বাজারগুলো রপ্তানি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। আরও নতুন নতুন অঞ্চলে রপ্তানি সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিসক্লোজারে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার জানিয়েছে, তাদের পর্ষদ ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।