সাবেক কর্মস্থল নিয়ে ‘নেগেটিভ অনলাইন রিভিউ দেওয়ায়’ দুবাইয়ে গ্রেপ্তার আইরিশ ব্যক্তি
সাবেক কর্মস্থল নিয়ে গুগলে নেতিবাচক রিভিউ পোস্ট করার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ঘুরতে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক বাসিন্দা।
দুবাইয়ের সাবেক নিয়োগকর্তাকে নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করায় অক্টোবরে আবুধাবি বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন ক্রেইগ ব্যালেন্টাইন।
তার বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে অনলাইন রিভিউতে করা মন্তব্যের জন্য আরব আমিরাতের কঠোর সাইবার অপরাধ আইনে তিনি জেলেও যেতে পারেন।
৩৩ বছর বয়সি এই কেয়ারগিভারকে পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে করা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমিরাত ছাড়তে পারবেন না।
বিবিসি নিউজ এনআই-কে ভিডিও কলে ক্রেইগ ব্যালেন্টাইন বলেন, 'স্রেফ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আর স্কাউট ভলান্টিয়ারিংয়ের জন্য আমি আবুধাবি/দুবাই এসেছিলাম। আবুধাবি বিমানবন্দরে নামার পর আমাকে আটক করা হবে, তা ভাবতেও পারিরিনি।'
ক্রেইগ জানান, গ্রেপ্তারের দিন স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট থেকে পরদিন রাত ১টা পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হয়। এ সময় তাকে পরিবার বা বন্ধুদের কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেওয়া হয়নি।'
গ্রেপ্তারের কারণ
২০২৩ সালে দুবাইয়ের একটি কুকুর পরিচর্যার স্যালুনে চাকরি নেন ক্রেইগ ব্যালেন্টাইন।
প্রায় ছয় মাস কাজ করার পর অসুস্থতাজনিত কারণে তার ছুটির প্রয়োজন হয়। অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে নিয়োগকর্তার কাছে ডাক্তারের সনদও জমা দেন।
কিন্তু কাজে না যাওয়ায় আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের কাছে 'পলাতক' হিসেবে ক্রেইগের নাম নিবন্ধিত করা হয়। এর ফলে তিনি দেশটি ছাড়তে পারেননি।
পরে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সক্ষম হ ক্রেইগ। এরপর উত্তর আয়ারল্যান্ডে ফিরে যান। তবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে তার দুই মাস সময় লেগেছিল, খরচ হয়েছিল কয়েক হাজার পাউন্ড।
উত্তর আয়ারল্যান্ডে ফিরে তিনি ওই কুকুর পরিচর্যা স্যালুন নিয়ে অনলাইন রিভিউ লেখেন। সেখানে তিনি সাবেক নিয়োগকর্তার কারণে যেসব সমস্যায় পড়েছিলেন, তা তুলে ধরেন।
বিবিসি নিউজ এনআই-কে ক্রেইগ বলেন, ওই গুগল পোস্টে 'আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তা ব্যাখ্যা করেছি।'
অক্টোবরের শেষদিকে সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটাতে তিনি আরব আমিরাতে ফিরে যান। বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মানহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্রেইগকে আবুধাবি থেকে দুবাইয়ে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি আদালতে উঠবে নাকি অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে, এখন সেই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
এদিকে বিমান অবতরণের পর দীর্ঘ সময় ক্রেইগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তার পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা হাসপাতাল, পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
অবশেষে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় বাড়িতে ফোন করে নিজের খবর জানান ক্রেইগ।
এখন আর গ্রেপ্তার না থাকলেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি আরব আমিরাত ছাড়তে পারছেন না। তিনি দুবাইয়ে এক বন্ধুর বাসায় থাকছেন।
এই অবস্থায় ক্রেইগ আরব আমিরাতে কোনো কাজ করতে পারছেন না। নিজ দেশে ফিরেও নিজের চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। মামলাটির নিষ্পত্তি হতে কতদিন লাগবে, জানেন না তা-ও।
ক্রেইগ বলেন, তিনি ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তবে এই অভিজ্ঞতা ভীষণ কঠিন।
এদিকে ক্রেইগকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি অধিকার সংস্থার সাহায্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা। তাকে দেশে ফেরাতে তারা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার মিশেল ও'নিলকেও অনুরোধ করেছেন আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এছাড়া ক্রেইগের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তাও চেয়েছেন তারা। ক্রেইগ যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টে ভ্রমণ করছিলেন।