দুই হাজার বছর আগে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুতপাতে কাচে পরিণত হওয়া মস্তিষ্কের সন্ধান
আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির লাভায় চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় আস্ত এক সভ্যতা। এমন ঘটনা ইতিহাসে আর দু'টি নেই। কিন্তু কে ভেবেছিল এই জ্বলন্ত লাভায় পুড়ে ছাই না হয়ে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে এক মানবদেহ, এমনকি তার মস্তিষ্কও।
৭৯ খ্রিষ্টাব্দে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে হারকিউলেনিয়াম শহরটি চাপা পড়ে যায়। গত শতাব্দীতে তার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হয় দেহটি। দেহটি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৬০ সালে।
গবেষকদের প্রতিবেদন বলছে, এক কাঠের বিছানায় মুখ নিচু করে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল দেহটি। অনুমান করা হয় রাজা অগাস্টাসকে দেবতা রূপে পুজো করা হতো সে সময়ে। আর সেই কাজটি করতেন এই মানুষটি। অর্থাৎ পেশায় তিনি ছিলেন পুরোহিত। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২৫-এর কাছাকাছি।
ইতালির নেপলস ফেদেরিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ পিয়ের পাওলো পেট্রোন ছিলেন এই দেহ নিয়ে চলা গবেষক দলের নেতৃত্বে। পেট্রোন জানান, ২০১৮ সালে যখন তারা কাজ করছিলেন এই নিয়ে, দেহের মাথার খুলির ভেতর থেকে কাচের মতো কিছু তারা দেখতে পেয়েছিলেন। তখন থেকেই আবার নতুন করে বিশদে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত গবেষণায় পেট্রোন এবং তার সহকর্মীরা উল্লেখ করেন অগ্ন্যুৎপাতের কারণে হওয়া তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঠিক তার পরেই হিমপ্রবাহের জন্য মস্তিষ্কের কোষ কাচের মতো হয়ে গিয়েছে।
অনুমান করা হচ্ছে যে এই মানুষটির মস্তিষ্ক প্রচণ্ড গরম লাভার সংস্পর্শে এসে প্রথমে নিশ্চয়ই একেবারে গলে গিয়েছিল। তার পর দ্রুত ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার ফলে কাচের মতো দেখাচ্ছে, বলছেন গবেষকরা। শুধু মস্তিষ্কের কোষই নয়, ২ হাজার বছর আগের ওই দেহ থেকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে স্নায়ু কোষ আর মেরুদণ্ডও। মস্তিষ্কের কোষের মতো এগুলোও জমাটবাঁধা অবস্থাতেই রয়েছে।
সাম্প্রতিক নতুন করে পাওয়া তথ্য নিয়ে গবেষকরা কাজ করেন, যা প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন সাময়িকী পিএলওএস ওয়ানে। অগ্ন্যুৎপাতের সময়কার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করেও ভিট্রিফিকেশনের ফলে যে দু'হাজার বছর ধরে অবিকল থাকল দেহটি, এটি বোঝার পর থেকে নৃতত্ত্ববিদদের সামনে একটি নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে।