পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
'পতিত স্বৈরাচার পেছন থেকে আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে' মন্তব্য করে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত দুই দিনে রাজধানী ও চট্টগ্রামে সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ''আজকে দেশের চারদিকের অবস্থা দেখে অনেকে একটু আতঙ্কিত হচ্ছেন, উদ্বিগ্ন হচ্ছেন.. এগুলো কী হচ্ছে?"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আসলে আপনাদের বুঝতে হবে... আমাদের সেই শত্রুরা যারা সামনে থেকে চলে গেছে… কিন্তু পেছনে থেকে তারা দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। এখানে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দেশের মানুষেরা কেনো জানি না সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। একটু ধর্য্য ধরতে হবে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এই সরকার ব্যর্থ হলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে, বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবে… আমরা আবারো সেই অন্ধকারে চলে যাব। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় আপনাদের ইতিবাচক চিন্তা করা প্রয়োজন।
রাজধানীর হোটেল লেকশোরে 'তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ' শীর্ষক গ্রন্থের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। লেখক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের বইটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের 'উড ব্রিজ'। অনুষ্ঠানস্থলে বইটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
৫৭১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন-কর্ম-রাজনীতির নানা দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
'সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আঘাত রুখতে হবে'
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, '' একটা বিষয় অত্যন্ত জরুরি বলে আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে… যেটা হচ্ছে, সংবাপত্রের ওপর আঘাত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্যে আমরা সবসময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিন আমাকে বণিকবার্তার সম্পাদক বলছিলেন যে, আপনারা এই বিষয়টাকে জোরে বলেন না কেনো যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে খালেদা জিয়ার সময়ে… বিএনপির সময়ে…. এটা হচ্ছে বাস্তবতা।"
তিনি বলেন, ''আজকে যখন দেখছি, কিছু সংখ্যক হঠকারী, কিছু সংখ্যক উস্কানিদাতা— তারা বিভিন্নভাবে এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবার চেষ্টা করছেন, ধবংস করার চেষ্টা করছেন— যেটা কোনোমতেই সচেতন মানুষের, দেশপ্রেমিক মানুষের মেনে নেয়া উচিত নয়। আমি অনুরোধ জানাব, সংশ্লিষ্ট সকলকে যে, অনুগ্রহ করে এই ভয়াবহ আত্মহননের কাজ থেকে সরে আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহযোগিতা করুন।"
সুদূর প্রবাসে থেকে দলকে সংগঠিত করে এবং দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক রহমানসহ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''একটা পরিবারের ওপরে কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হতে পারে, একজন ইয়াং সম্ভাবনাময় নেতা তার ওপরে কিভাবে নির্যাতন হতে পারে— তা এই জিয়া পরিবারকে এবং তারেক রহমান সাহেবকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না। তাঁর (তারেক রহমান) উপরে নিদারণ নির্যাতন হয়েছে, শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, মানসিক নির্যাতন হয়েছে।"
''অথচ দেখেন এই নেতা তিনি কখনো থেমে যাননি এবং মাথানত করেননি। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে, মিথ্যা মামলায় বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। তখন বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবে এনিয়ে অনেকের মনে চিন্তা ছিল। অনেকে ভাবছিলেন যে, আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এই দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা। কিন্তু, তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে অতি দ্রুত সমস্ত দলকে সংগঠিত করে ছাত্র-জনতার মহান একটা বিপ্লব ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, তার মধ্যে যে অসাধারণ গণতান্ত্রিক মন আছে, আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করছি– তারা সবসময় বুঝতে পারি।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারু কলা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন, শরীফুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ,মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কূটনীতিক ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।