বিভেদ-বিভাজনকে উসকে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল
সাম্প্রতিক সময়ের 'অস্থিতিশীল' ঘটনাবলি বিভেদ-বিভাজনকে উসকে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন-ড্যাবের উদ্যোগে নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. শামসুল আলমের স্মরণে 'গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা' শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "তিন মাসও হয়নি এখনো। এই তিনটা মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, আমার নিজের ঘরেই যদি সেই বিভাজন থেকে যায়, বিভেদ থেকে যায় এটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।"
তিনি আরও বলেন, "এই কয়েকটা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমরা এতোদিন লড়াই করলাম তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই না। আমি তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির পোস্টের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "আমি কারো নাম বলব না, বলতে চাই না তবে আপনারা (চিকিৎসক) সমাজের শিক্ষিত মানুষ গভীরভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে আজকে বিভেদের দিকে ঠেলছে, যারা আজকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছে তারা আমাদের আসল শত্রু না মিত্র। এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।"
বিভাজন ছেড়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "আমরা জীবনের শেষ অংশে চলে আসছি আমরা। সায়াহ্নে এসে আপনাদের বলতে চাই, যদি আপনারা দেশকে রক্ষা করতে চান, আপনারা স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চান, আপনাদের অধিকারকে রক্ষা করতে চান তাহলে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হউন। বিভাজনের কাছে আপনারা কখনো মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।"
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "এই অন্তবর্তীকালীন সরকার কিন্তু কারো দয়া দান নয়। এ দেশের ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেটাকে স্বীকার করে নিয়ে পুরোপুরিভাবে এ দেশের জনগণের যে মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াটাই তাদের জন্য সর্বোত্তম বলে আমরা মনে করি।"
তিনি আরও বলেন, "যারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন তারা এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে তা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।"
১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে চিকিৎসক নেতা ডা. মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ডা. মিলনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।