গাজীপুরে পোশাক কারখানার কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাহমুদ জিন্স লিমিটেড নামক একটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতন নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে এক কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভুক্তভোগী ডিএমডি রাফি মাহমুদ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নওগাঁর পত্নীতলার নয়ন বাবু (৩৫) ও কাজল হোসেন (৩২); কুড়িগ্রাম সদরের রাজীব মিয়া (৪২), রাজারহাটের আশরাফ আলী (৫৪); সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের রুবেল রানা (২৮); রংপুরের খাদেমুল ইসলাম (৩৭); এবং মুন্সিগঞ্জের শাহিন দেওয়ান (৫২)।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে তাদের আদালতে তোলা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রা এলাকায় অবস্থিত মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানাটি ৯ অক্টোবর বিভিন্ন সংকট দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। অপরদিকে শ্রমিকদের এক মাসের বেতন, সার্ভিস বেনিফিট এবং কারখানা কর্মকর্তাদের ছয় থেকে নয় মাসের বেতন বকেয়া ছিল।
বকেয়া পরিশোধে মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেতন-ভাতাসহ পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হন। বেতনের আশায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া এবং অন্যত্র কর্মরত শ্রমিকেরাও ছুটি নিয়ে কারখানায় উপস্থিত হন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার পক্ষ থেকে নোটিশে জানানো হয়, বকেয়া পরিশোধের টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পরিদর্শক মো. আজাদ রহমান বলেন, এ ঘোষণার পর শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, যা দিনভর স্থায়ী ছিল।
সন্ধ্যায় মালিকপক্ষ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরে গেলে শ্রমিকেরা কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) রাফি মাহমুদকে আটকে বেদম পিটুনি দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাত ৮টার দিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম জানান, ঘটনায় রাফি মাহমুদ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ কারখানার শ্রমিকেরা গত আগস্টেও পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন আদায়ে আন্দোলন করেছিলেন। পরে মালিকপক্ষ অনেকের বেতন পরিশোধ করলেও কিছু শ্রমিকের বেতন বকেয়া থেকে যায়।