যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো ইউক্রেনীয় সেনাদের সংখ্যা বাড়ছেই: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ২০২২ ও ২০২৩ সাল মিলিয়ে যে সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনা যুদ্ধ–ময়দান ছেড়েছিলেন— চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে তারচেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি সেনা ময়দান ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি)।
এতে করে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সংকট নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
স্থানীয় সময় গতকাল (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়া সেনাদের বিরুদ্ধে অন্তত ৬০,০০০ মামলা করেছেন ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটররা। যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের (সেনাদের) ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
প্রায় ৩ বছর ধরে চলতে থাকা এ যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশিরভাগ সেনাই এখন ক্লান্ত; তাদের বিশ্রাম দরকার। আর এই বিশ্রামের জন্য ময়দান ছেড়ে পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের।
সামরিক সদস্যরা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, রোটেশনের ভিত্তিতে মাত্র ৪ সপ্তাহের বিশ্রাম এবং পুরনায় ট্রেনিং নিতে যে সংখ্যক সেনা প্রয়োজন, তা বর্তমানে নেই ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীতে (ইউএএফ)।
এফটিকে এক কর্মকর্তা বলেন, "তারা সেনাদের পুনর্বাসন এবং বিশ্রাম দেওয়ার পরিবর্তে কেবল তাদের হত্যা করছে।"
যারা যুদ্ধে মারা যাচ্ছেন, তাদের জায়গায় স্বল্প বা অপ্রশিক্ষিত, অযোগ্য শিক্ষানবিস দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, ফ্রন্টলাইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে, এই নতুন নিয়োগ পাওয়া সেনাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশই তাদের প্রথম রোটেশন শুরুর কয়েকদিনের নিহত বা আহত হয়েছেন।
এছাড়া, ন্যাটো দেশগুলোতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েও অনেকে পালিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোলিশ নিরাপত্তা সূত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১২ জন ইউক্রেনীয় সেনা পোল্যান্ডে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ট্রেনিংসেন্টার থেকে পালিয়ে গেছেন।
এ সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেনের এক এমপি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ২০২২ সালে রাশিয়ার সাথে সংঘাত শুরুর পর থেকে প্রায় ২,০০,০০০ ইউক্রেনীয় সেনা ময়দান ছেড়েছেন।
এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের অন্তত ৫ লাখ সেনা নিহত হয়েছেন। ব্যাপক এই ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সেনা বর্তমানে যুদ্ধের ময়দানে সক্রিয় আছেন।
সাম্প্রতিক মিডিয়া প্রতিবেদন এবং ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতাদের বরাত দিয়ে রুশ গণমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, অনিচ্ছুক লোকেদের রাস্তা, এমনকি নাইটক্লাব থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সামরিক দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এই লোকেদের মধ্যে অন্ধ, বধির ও মানসিক প্রতিবন্ধীও আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
চলতি সপ্তাহে টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন একজন ভুক্তভোগী– যিনি জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া এড়াতে পেরেছিলেন– বলেন, "সামরিক শিক্ষানবিস হওয়ার জন্য উপযুক্ত বয়সী পুরুষেরা এখন রাস্তায় অবাধে হাঁটতে ভয় পান।"
এদিকে, গত বুধবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী আগামী মাসে প্রায় ১,৬০,০০০ নতুন সেনা নিয়োগ করতে চাইছে। এ লক্ষ্য পূরণে ন্যূনতম শিক্ষানবিসের বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে যেন ১৮-তে নামিয়ে আনা হয়, সেজন্য ইউক্রেন সরকারকে চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।