ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির আন্দোলন: আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি
ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজ শনিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ কারখানাতেই উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। যদিও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
পোশাককর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকার তাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট চার শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। তবে পোশাককর্মীরা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখান করে চার শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রের তথ্যমতে, আজ শিল্পাঞ্চলে ১০টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। যার মধ্যে চারটি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় গেলেও কাজ না করে বেরিয়ে যান কিংবা কর্মবিরতি পালন করেন।
এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় 'নো ওয়ার্ক, নো পে'র ভিত্তিতে পাঁচটি কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং একটি কারখানায় স্ববেতনে সাধারণ ছুটি রয়েছে।
শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সকালে সাত-আটটি কারখানায় কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। পরে আবার এর মধ্যে তিন-চারটি কারখানার শ্রমিকরা আলোচনার পরে কাজ শুরু করেছেন।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সার্বিকভাবে গত কয়েকদিনের তুলনায় শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি আজ অনেকটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ কারখানায় কাজ চলছে। আমরা নিয়মিত সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছি।
বিজিএমইএ'র তথ্যমতে, যে চার কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে চলে গেছেন, সেগুলো হলো- মুন রেডিওয়্যার লিমিটেড, পাইওনিয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, এথিক্যাল গার্মেন্টস লিমিটেড ও ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে এজে সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, মাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা সুপার গার্মেন্টস ও নাসা বেসিক লিমিটেড। সাধারণ ছুটি রয়েছে নীট এশিয়া লিমিটেডে।
শ্রমিক ছাঁটাই
এদিকে ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও ঠিক কতগুলো কারখানায় কি পরিমাণ শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া টিবিএসকে বলেন, আজ পর্যন্ত তারা তিনটি কারখানায় তিন শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর পেয়েছেন। এর মধ্যে দুটি কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৬ (১) ধারা এবং একটিতে ২৩(১) ধারায় ছাঁটাই করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন মালিকদের এসব বিষয়ে অনুরোধ করেছি, তখন তারা বলছেন যে যারা আমাদের ক্ষতি করছে, অযৌক্তিকভাবে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে, তারা আমাদের লোক হতে পারে না। তারা ভিন্ন স্বার্থে কাজ করছে। এদের রাখা হলে কারখানা চালাতে পারব না। তাদের সর্বোচ্চ বেনিফিট দিয়েই ছাঁটাই করা হয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্প পুলিশ নিয়মিত মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সকাল থেকে কয়েকটি কারখানায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। যদিও সব তথ্য এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।
কারখানা ভাঙচুর, আটক দুই
এদিকে গিল্ডেন এবং ডংলিয়ান নামে দুটি তৈরি পোশাক কারখানা ভাংচুরের অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয় শেষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।